ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আলফাডাঙ্গায় কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ Logo গোমস্তাপুরে কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি Logo সৌদি আরবে ভবন থেকে পড়ে বাংলাদেশী রেমিটেন্স যোদ্ধার মৃত্যু Logo বাগেরহাট জেলা শ্রমীক লীগের সাধারন সম্পাদক মনির বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আটক Logo খোকসায় এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে কেস্ট ও সনদপত্র বিতরন Logo কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনাল Logo ভেড়ামারায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ Logo দৌলতপুরের একই পরিবারের চারজনের একসঙ্গে জানাজা, পাশাপাশি দাফন Logo ভূরুঙ্গামারীতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত Logo ডাক্তার হয়ে মানুসের সেবা করতে চায় আলফাডাঙ্গার তাসমিন ইসলাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়া সরকারি নজরদারির না থাকায়’বেড়েছে তামাক চাষ

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ায় সরকারি নজরদারির না থাকায় বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। তামাক কোম্পানিগুলোর বীজ, সার, কীটনাশক ও অর্থের প্রলোভনে পড়ে ক্ষতিকর বিষবৃক্ষ তামাক চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। ধান, গম বা ভুট্টা বন্ধ করে তামাক চাষে ঝুঁকছেন তারা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।

 

তবে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

 

দেশের যেসব জেলায় তামাক চাষ বেশি হয় তার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম। এ জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা তামাক চাষের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকেছেন। বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শিশু বৃদ্ধসহ তামাক চাষির পরিবারের সবাই।

 

বছরের পর বছর ধরে তামাক চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। অনেকে অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। অন্যদিকে জমির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন কমছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এসব তামাক পোড়ানোর জন্য হাজারো ঘর বানানো হয়েছে। আর এসব ঘরের চুল্লিতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার টন জ্বালানি কাঠ। তামাক পোড়ানোর ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

 

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা ট্যোবাকো, জাপান ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, নাসির ট্যোবাকো, আকিজ ট্যোবাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার, কীটনাশক ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তামাক চাষ করতে চাষিদের আগ্রহী করে তুলেছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা, বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধ করে বিকল্প ফসলের আবাদ করার ও তামাক চাষের ক্ষতি তুলে ধরে সরকারিভাবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহলের মানুষ।

 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

 

কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝাচ্ছেন এবং তামাকের বদলে অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

 

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গত বছরে ১০ হাজার ৯৩১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছিল। প্রতি বছর দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ করা হয়। ২০১৯-২০ সালে দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এবার চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে।

 

তার মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৮৫ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৮৩০ হেক্টর এবং মিরপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় কৃষি জমি ২৩ হাজার ১১১ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১০ হাজার ৮৯১ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় কৃষি জমি রয়েছে ৩২ হাজার ৪৪৮ হেক্টর।

 

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা আজ শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তামাক খেত। তামাকের খেতে কেউ পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন, তামাক পাতা তুলছেন। আবার কেউ তামাকের পাতা মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ তামাক শক্ত লাঠির সঙ্গে বাঁধছেন। তামাক পোড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধা ও শিশুরা।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আলফাডাঙ্গায় কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়া সরকারি নজরদারির না থাকায়’বেড়েছে তামাক চাষ

আপডেট টাইম : ১২:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ায় সরকারি নজরদারির না থাকায় বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। তামাক কোম্পানিগুলোর বীজ, সার, কীটনাশক ও অর্থের প্রলোভনে পড়ে ক্ষতিকর বিষবৃক্ষ তামাক চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। ধান, গম বা ভুট্টা বন্ধ করে তামাক চাষে ঝুঁকছেন তারা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় তামাকের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।

 

তবে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

 

দেশের যেসব জেলায় তামাক চাষ বেশি হয় তার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম। এ জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা তামাক চাষের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকেছেন। বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শিশু বৃদ্ধসহ তামাক চাষির পরিবারের সবাই।

 

বছরের পর বছর ধরে তামাক চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। অনেকে অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। অন্যদিকে জমির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন কমছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এসব তামাক পোড়ানোর জন্য হাজারো ঘর বানানো হয়েছে। আর এসব ঘরের চুল্লিতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার টন জ্বালানি কাঠ। তামাক পোড়ানোর ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

 

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা ট্যোবাকো, জাপান ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, নাসির ট্যোবাকো, আকিজ ট্যোবাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার, কীটনাশক ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তামাক চাষ করতে চাষিদের আগ্রহী করে তুলেছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা, বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধ করে বিকল্প ফসলের আবাদ করার ও তামাক চাষের ক্ষতি তুলে ধরে সরকারিভাবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহলের মানুষ।

 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

 

কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝাচ্ছেন এবং তামাকের বদলে অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

 

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গত বছরে ১০ হাজার ৯৩১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছিল। প্রতি বছর দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ করা হয়। ২০১৯-২০ সালে দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এবার চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে।

 

তার মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৮৫ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৮৩০ হেক্টর এবং মিরপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় কৃষি জমি ২৩ হাজার ১১১ হেক্টর, ভেড়ামারায় ১০ হাজার ৮৯১ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় কৃষি জমি রয়েছে ৩২ হাজার ৪৪৮ হেক্টর।

 

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা আজ শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তামাক খেত। তামাকের খেতে কেউ পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন, তামাক পাতা তুলছেন। আবার কেউ তামাকের পাতা মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ তামাক শক্ত লাঠির সঙ্গে বাঁধছেন। তামাক পোড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধা ও শিশুরা।


প্রিন্ট