আরিফুল ইসলাম জয়ঃ
কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী উপজেলা ভূরুঙ্গামারীতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু, বৃদ্ধ, রোগীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
উপজেলা সদর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের একই সংকট বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও টানা ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। দৈনন্দিন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনলাইন ক্লাস, কোচিং এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ইনজেকশন ও ওষুধ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা পরিবেশ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ব্যাটারিচালিত যন্ত্রপাতির কার্যকারিতাও হ্রাস পাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরাও এই সংকটে পড়েছেন চরম ক্ষতির মুখে। দোকানপাটে পণ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিন চালাতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয় বা ফাস্টফুড ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক দোকান আগেভাগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের দাবি, লোডশেডিং নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, “এইভাবে চলতে থাকলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও তীব্র হতে পারে।”
ভূরুঙ্গামারীর কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে বাস্তবায়ন অসম্ভব, যদি বিদ্যুৎ না থাকে। উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ অপরিহার্য।”
তাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভাগ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না। কোথাও কোথাও ‘মেরামতের’ নাম করে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: মিজানুর রহমান জানান, “ভূরুঙ্গামারীর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বরাদ্দের তুলনায় অনেক কম সরবরাহ পাওয়া যায়। গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবহারও বেড়েছে। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সংকট আরও বেড়েছে। তবে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
উপজেলাবাসী বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেন।
প্রিন্ট