কাজী নূরঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘দয়া করে সকলকে বলে দেবেন বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিএনপি একমাত্র দল যারা কোন বিনা আইনে থাকে না অর্থাৎ আমাদের ভেতরে কেউ যদি অন্যায় করে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে যিনি গ্রহণযোগ্য নয় তাকে কোনভাবেই দলে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে যশোর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা গত ১৬ টি বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তবে তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে; ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই! বিভিন্ন দাবি- দাওয়ার অসিলায় বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি আরো আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই বিএনপির মূল লক্ষ্য ভেঙে পড়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করা। কৃষকের উৎপাদন, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করাও আমাদের লক্ষ্য। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে দেশ পুনর্গঠন করবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরো বলেন, ‘জনগনের সমর্থন নেই; এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই, বিএনপির বিরুদ্ধে কারও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপিই প্রমাণ করেছে, অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ নির্বাচন দেওয়া জরুরি।’
বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা আরো বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করব। আমাদের অনেক কাজ; দেশকে পুনর্গঠনের কাজ।’
এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান। যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বাবু অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, যশোর কোতোয়ালী থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আনজুরুল হক খোকন, যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, ঝিকরগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন সুজন, মনিরামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, চৌগাছা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম চঞ্চল, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন। এছাড়া বক্তব্য দেন যশোর জেলা যুবদলের আহবায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি। সম্মেলনে কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের নেতারা বক্তব্য দেন।
যশোর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন বেলা সাড়ে ১০টায় যশোর ঈদগাহ ময়দানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রামে নিহত দলীয় নেতা কর্মীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। আওয়ামী স্বৈরাচার আমলে বিএনপি বা এর অঙ্গ সংগঠনের যে সকল নেতা কর্মী নিহত হয়েছেন এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি আমানুল্লাহ কাসেমী। সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।
প্রিন্ট