ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ছোটগল্পঃ পরিত্যক্ত রেলস্টেশন

– শামীম আহমেদ

ঝরা পাতার মতোই নিঃশব্দে পড়ে আছে ভরত খালী রেলস্টেশনটা। কত বছর আগে থেকে এখানে আর কোনো ট্রেন থামে না, কে জানে! রেললাইন ধরে দূর থেকে মাঝে মাঝে হুইসেল শোনা যায়, কিন্তু সেই শব্দও যেন ম্লান হয়ে আসে স্টেশনের শূন্যতায়।

একদিন সন্ধ্যার দিকে, হঠাৎ করে স্টেশনে একজন আগন্তুক আসে। বয়স ত্রিশের কোঠায়, পরনে কালো রঙের কোট, কাঁধে পুরনো ব্যাগ। স্টেশনের নীরবতা ভেঙে সে আস্তে আস্তে ভাঙা বেঞ্চির ওপর বসে পড়ে। চোখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু মুখে যেন এক অদ্ভুত শান্তি।

কিছুক্ষণ বসে থেকে আগন্তুকটা একটা পুরনো পকেটঘড়ি বের করে সময় দেখে। তারপর চারদিকে তাকিয়ে, মনে মনে যেন কিছু ভাবতে শুরু করে। স্টেশনের দেয়ালে ধুলোমাখা পোস্টার, একদিকে ঝুলে থাকা ভাঙা ঘড়ি, সবকিছুতেই এক ধরনের পুরনো দিনের গন্ধ।

আকস্মিকভাবে, স্টেশনের ভেতর থেকে এক বৃদ্ধ বেরিয়ে আসে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও চোখ দুটোতে অদ্ভুত এক তীক্ষ্ণতা। আগন্তুককে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ান।
“তুমি এখানে কেন?” বৃদ্ধের কণ্ঠস্বর খসখসে, কিন্তু কৌতূহলী।
“আমি খুঁজছি। কিছু স্মৃতি, কিছু গল্প,” আগন্তুকের কণ্ঠে নরম স্বর।
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “এখানে তো আর কিছু নেই। সবই পরিত্যক্ত।”
“সবই পরিত্যক্ত, কিন্তু কিছুই হারায় না,” আগন্তুকের উত্তর।

বৃদ্ধ কিছুক্ষণ নীরব থেকে মাথা নেড়ে চলে গেলেন। আগন্তুক আবার বেঞ্চিতে বসে পড়ল, পকেট থেকে একটা পুরনো চিঠি বের করে পড়তে শুরু করল। চিঠির কাগজটা হলুদ হয়ে গেছে, তবু শব্দগুলো স্পষ্ট। যেন সময়ের পাতা থেকে টেনে আনা কোনো গল্প…।

রাত ঘনিয়ে আসছে। স্টেশনের বাতাসে শীতলতা বাড়ছে। আগন্তুক চিঠিটা ভাঁজ করে রেখে দেয়। উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশে আরেকবার তাকায়। তারপর ধীর পায়ে রেললাইন ধরে অদৃশ্য হয়ে যায় রাতের আঁধারে…।

লেখকঃ শামীম আহমেদ
              কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে শারজায় বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

ছোটগল্পঃ পরিত্যক্ত রেলস্টেশন

আপডেট টাইম : ০৩:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
শামীম আহমেদ, কবি, লেখক ও সাহিত্যিক :

– শামীম আহমেদ

ঝরা পাতার মতোই নিঃশব্দে পড়ে আছে ভরত খালী রেলস্টেশনটা। কত বছর আগে থেকে এখানে আর কোনো ট্রেন থামে না, কে জানে! রেললাইন ধরে দূর থেকে মাঝে মাঝে হুইসেল শোনা যায়, কিন্তু সেই শব্দও যেন ম্লান হয়ে আসে স্টেশনের শূন্যতায়।

একদিন সন্ধ্যার দিকে, হঠাৎ করে স্টেশনে একজন আগন্তুক আসে। বয়স ত্রিশের কোঠায়, পরনে কালো রঙের কোট, কাঁধে পুরনো ব্যাগ। স্টেশনের নীরবতা ভেঙে সে আস্তে আস্তে ভাঙা বেঞ্চির ওপর বসে পড়ে। চোখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু মুখে যেন এক অদ্ভুত শান্তি।

কিছুক্ষণ বসে থেকে আগন্তুকটা একটা পুরনো পকেটঘড়ি বের করে সময় দেখে। তারপর চারদিকে তাকিয়ে, মনে মনে যেন কিছু ভাবতে শুরু করে। স্টেশনের দেয়ালে ধুলোমাখা পোস্টার, একদিকে ঝুলে থাকা ভাঙা ঘড়ি, সবকিছুতেই এক ধরনের পুরনো দিনের গন্ধ।

আকস্মিকভাবে, স্টেশনের ভেতর থেকে এক বৃদ্ধ বেরিয়ে আসে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও চোখ দুটোতে অদ্ভুত এক তীক্ষ্ণতা। আগন্তুককে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ান।
“তুমি এখানে কেন?” বৃদ্ধের কণ্ঠস্বর খসখসে, কিন্তু কৌতূহলী।
“আমি খুঁজছি। কিছু স্মৃতি, কিছু গল্প,” আগন্তুকের কণ্ঠে নরম স্বর।
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “এখানে তো আর কিছু নেই। সবই পরিত্যক্ত।”
“সবই পরিত্যক্ত, কিন্তু কিছুই হারায় না,” আগন্তুকের উত্তর।

বৃদ্ধ কিছুক্ষণ নীরব থেকে মাথা নেড়ে চলে গেলেন। আগন্তুক আবার বেঞ্চিতে বসে পড়ল, পকেট থেকে একটা পুরনো চিঠি বের করে পড়তে শুরু করল। চিঠির কাগজটা হলুদ হয়ে গেছে, তবু শব্দগুলো স্পষ্ট। যেন সময়ের পাতা থেকে টেনে আনা কোনো গল্প…।

রাত ঘনিয়ে আসছে। স্টেশনের বাতাসে শীতলতা বাড়ছে। আগন্তুক চিঠিটা ভাঁজ করে রেখে দেয়। উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশে আরেকবার তাকায়। তারপর ধীর পায়ে রেললাইন ধরে অদৃশ্য হয়ে যায় রাতের আঁধারে…।

লেখকঃ শামীম আহমেদ
              কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।

 


প্রিন্ট