জেলাল আহম্মদ রানা, কুড়িগ্রাম (নাগেশ্বরী) প্রতিনিধি
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাগেরশরী উপজেলায় শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় দিনের বেলায়ও সূর্যের দেখা মিলছে না। পরিস্থিতি এমন যে, সকাল ৯টায়ও রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। চালকেরা জানান, কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে, এক হাত দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, “তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন এমন থাকতে পারে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘন কুয়াশা সারা দিন কাটছে না।”
এদিকে শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। কাজের অভাবে অনেকেই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বয়স্ক ও শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম, সোহেল রানা ও জাহিদ বলেন, “রাস্তায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন কুয়াশা আগে কখনো দেখিনি। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায় না।”
স্থানীয় প্রশাসন শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত শীত ও কুয়াশা কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমন ধানের বীজ তলা,আলু,সরিষা সহ সব্জীর আবাদ।কৃষিবিদ আবু জাফর নেয়ামতুল্যাহ ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকতা আক্তার জামিল জানান,কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো সঠিকভাবে ফসলে পৌঁছায় না, যা ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে ফসলের বৃদ্ধি কমে যায়।কুয়াশা বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়, যা ছত্রাকজনিত রোগ যেমন ব্লাইট, পাউডারি মিলডিউ এবং ডাউনি মিলডিউ-এর প্রকোপ বাড়ায়।ফলের গুণমান ও উৎপাদন কমে যায়।
বিশেষত শীতকালীন সবজি এবং ফল যেমন টমেটো, আলু, সরিষা, এবং ধান কুয়াশার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুল ও ফলের ঝরে পড়ার হার বাড়ে।কুয়াশা মাটির উপরিভাগের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়, যা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এতে কচি গাছ বা চারাগাছ সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।
এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে তিনি বলেন পলিথিন বা কভার ব্যবহার করে ফসল কুয়াশার সরাসরি প্রভাব থেকে রক্ষা করা যায়। ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করে রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করা উচিত।
শীত মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রিন্ট