মোঃ জসিম উদ্দীন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ে ‘‘আজাদ মেলা’’ নামে সামাজিক যাত্রাপালার অনুমতি নিয়ে রাতভর পরিচালিত হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। শুধু তাই নয়, মেলায় চটকদার পুরস্কারের লটারি বিক্রি করা হচ্ছে, যা যুবসমাজকে নষ্ট করছে। স্থানীয়রা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন বলছে, অনুমতি পত্রের বাইরে গিয়ে যদি কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ২৯ নভেম্বর শুক্রবার রাতেও মেলা এলাকায় অশ্লীল কার্যক্রম চলছিল। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া থানার সামনে ‘‘আজাদ মেলা’’ প্রাঙ্গণে সন্ধ্যার আগেই একটি প্যানেলে লটারির বাক্স তোলা হচ্ছিল। ক্রয়কৃত ২০ টাকা মূল্যের টিকিটগুলো এক এক করে বাছাই করে একটি বিছানার চাদরে রাখা হয়। রাত ১০টা থেকে লটারির কার্যক্রম শুরু হয় এবং হাজার হাজার টিকিট বিক্রি করে ৩১টি পুরস্কার দেয়া হয়, এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার ছিল একটি মোটরসাইকেল। একদিনেই লাখ লাখ টাকা আয় করছে লটারি আয়োজকরা।
রাত ১২টার পর মেলায় শুরু হয় ‘‘সৌরভী ডিজিটাল অপেরা যাত্রাপালা’’ নামে অশ্লীল নৃত্য। একের পর এক চটকদার গান ও শরীর দোলানো নৃত্য দেখতে এসে উঠতি বয়সী যুবকরা প্রবেশ করেন, প্রতি টিকিটের মূল্য ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্রে ‘‘সামাজিক যাত্রাপালা’’ উল্লেখ থাকলেও সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। মেলায় যুবকরা সামনে গিয়ে নাচের মধ্যে টাকা ছিটিয়ে বিনোদন নিচ্ছিলেন। রাত যত গভীর হয়, ততই নোংরামি বাড়ে, যা চলে ভোররাত পর্যন্ত। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুদ আহম্মেদ সুবর্ণসহ ঠাকুরগাঁও জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, ‘‘জুয়ার নামে মেলায় লটারি অনুমতি দেয়া মোটেও সঠিক হয়নি’’ এবং ‘‘সামাজিক যাত্রাপালার নামে এই নোংরামি সমাজের জন্য বিপদজনক’’।
তারা জানান, এতে সমাজ ধ্বংস হচ্ছে, চুরি-ছিনতাই বাড়বে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। বিশেষত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা চলছে, এমন অবস্থায় মেলার অনুমতি দেয়া উচিত হয়নি। তারা অবিলম্বে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
মেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা আনসারুল হক জানান, ‘‘মেলায় অশ্লীল নৃত্য চলেছে, যা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব’’।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, ‘‘লটারি ও সামাজিক যাত্রাপালার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তবে যাত্রার নামে কোনো ধরনের অশ্লীল পরিবেশনা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’’।
আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন, হুমকিতে ফসলী জমি, প্রশাসন নিশ্চুপ
গেল ২৩ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মেলা কমিটি এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ায় এক মাসব্যাপী ‘‘আজাদ মেলা’’ উদ্বোধন করা হয়।
প্রিন্ট