ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নতুন নেতৃত্বের আ’লীগ চায় বিএনপি

♦ পুরনো নেতৃত্বে মাঠে নামা নিয়ে আপত্তি ♦ অনুশোচনার পর নতুনদের সুযোগ হতে পারে ♦ অপেক্ষা করতে হবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ♦

-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোগো।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেখছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের পুরনো নেতৃত্ব রাজনীতিতে ফিরতে চাইলেও সেই সুযোগ ছাত্র-জনতা দেবে না। বিএনপিও তাদের এ অবস্থানের পক্ষে। তবে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন নেতৃত্বের আওয়ামী লীগকে হয়ত আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

 

বিএনপি নেতাদের ধারণা, মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ সেটা হারাতে চাইবে না। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের মতো বড় ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করেনি বলে উল্লেখ করেন তারা।

 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ আত্মগোপনে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।

 

নানা ঘটনাপ্রবাহে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। যদিও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। তারা দলটিকে নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

 

১০ নভেম্বর রাজধানীর জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার নাই।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

 

তবে দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একমত নন। দলটি বলছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচারে জোর দেওয়ার পক্ষে বিএনপি। আর অনুশোচনা পর নতুন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারে।

 

পুরনো নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে কেন ফেরার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না সে বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের এমন হত্যাকাণ্ডের পরও দলটির কোনো নেতা এখনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। তাদের অনুশোচনাও নেই। দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি যে, গত ১৫ বছরে যা হয়েছে তা খুব খারাপ হয়েছে। তারা বলেননি, তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনার জন্য দায়ী। হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতা পদত্যাগও করেনি। বরং দলটির পক্ষ থেকে এখনও বলা হচ্ছে, অভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র।

 

বিএনপি মনে করছে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতিতে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে। মাঠে ফিরতে হলে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। ওই নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতাও নির্ভর করছে জনগণ তাদের কতোটুকু গ্রহণ করবে তার ওপর। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে অন্যান্য দলের মতো সুযোগ সুবিধা চাইবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো পরিস্থিতিতে দলটি যেতে পারে।

 

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি-না তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে, সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতোমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামত অগ্রাহ্য করতে পারি না।’ তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আপনার কোনো আপত্তি নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই যে এ দল বা অন্য দল বেছে নেব। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছি।’

 

প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসনের’ চেষ্টা হলে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ হুঁশিয়ারিও দেন একাধিক নেতা।

 

এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই- এমনটা বলিনি। গণমাধ্যমে বিষয়টা সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচন করবে কি করবে না তা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কারা রাজনীতি করবে আর কারা করবে না। আমরা সেখানে কিছুই না।’

 

তবে মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বা নির্বাচন থেকে নির্দিষ্ট দলকে বাদ দেওয়ার নেতিবাচক প্রবণতা একটি ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাইলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হবে কেন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ অপরাধ করেনি, করেছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের গণহত্যাসহ সব অপকর্মের বিচার হওয়া উচিত সবার আগে। এরপর রাজনৈতিক চর্চায় দলটি ফিরলে দেশের জনগণই সব অপকর্মের জবাব দেবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। যখন একটি দল আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর খুব বেশি নির্ভর করে, তখন এটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং গণদাবিগুলি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দলটির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো জনগণের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কমে যাওয়া।’

 

আওয়ামী লীগ অদূর ভবিষ্যতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলটি রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পাবে কিনা তা নির্ভর করছে জনগণ তাদের কিভাবে গ্রহণ করে।’

 

১৪ নভেম্বর রংপুরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনাদের নেতারা আপনাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আপনারা অনুশোচনা করুন। জনগণের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চান। আমাদের দেশের জনগণ খুবই আবেগপ্রবণ, তারা ক্ষমাও করতে পারেন। এরপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিয়েন।’

 

এদিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব নেতা যারা গণহত্যা, গুম, খুনে জড়িত তাদের বিচার হোক, বিএনপি সেটা চায়। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

 

সূত্র বলছে, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তরা যাতে কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফিরতে না পারে সেজন্য বিএনপি জনসচেতনা গড়ে তুলবে। অন্তর্বর্তী সরকার হত্যা, গুম, দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। যদি না পারে, বিএনপি সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অপরাধের বিচার করবে।

 

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক তদন্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শাসনামলের সব অপকর্ম ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।’


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

নতুন নেতৃত্বের আ’লীগ চায় বিএনপি

আপডেট টাইম : ৯ ঘন্টা আগে
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক রিপোর্ট :

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেখছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের পুরনো নেতৃত্ব রাজনীতিতে ফিরতে চাইলেও সেই সুযোগ ছাত্র-জনতা দেবে না। বিএনপিও তাদের এ অবস্থানের পক্ষে। তবে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন নেতৃত্বের আওয়ামী লীগকে হয়ত আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

 

বিএনপি নেতাদের ধারণা, মাঠের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ সেটা হারাতে চাইবে না। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের মতো বড় ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করেনি বলে উল্লেখ করেন তারা।

 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ আত্মগোপনে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।

 

নানা ঘটনাপ্রবাহে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। যদিও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। তারা দলটিকে নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

 

১০ নভেম্বর রাজধানীর জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার নাই।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

 

তবে দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একমত নন। দলটি বলছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচারে জোর দেওয়ার পক্ষে বিএনপি। আর অনুশোচনা পর নতুন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারে।

 

পুরনো নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে কেন ফেরার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না সে বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের এমন হত্যাকাণ্ডের পরও দলটির কোনো নেতা এখনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। তাদের অনুশোচনাও নেই। দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি যে, গত ১৫ বছরে যা হয়েছে তা খুব খারাপ হয়েছে। তারা বলেননি, তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনার জন্য দায়ী। হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতা পদত্যাগও করেনি। বরং দলটির পক্ষ থেকে এখনও বলা হচ্ছে, অভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র।

 

বিএনপি মনে করছে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাঠের রাজনীতিতে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে। মাঠে ফিরতে হলে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। ওই নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতাও নির্ভর করছে জনগণ তাদের কতোটুকু গ্রহণ করবে তার ওপর। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে অন্যান্য দলের মতো সুযোগ সুবিধা চাইবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো পরিস্থিতিতে দলটি যেতে পারে।

 

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি-না তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে, সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতোমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামত অগ্রাহ্য করতে পারি না।’ তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আপনার কোনো আপত্তি নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই যে এ দল বা অন্য দল বেছে নেব। আমি রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছি।’

 

প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে। বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসনের’ চেষ্টা হলে ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ হুঁশিয়ারিও দেন একাধিক নেতা।

 

এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই- এমনটা বলিনি। গণমাধ্যমে বিষয়টা সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচন করবে কি করবে না তা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কারা রাজনীতি করবে আর কারা করবে না। আমরা সেখানে কিছুই না।’

 

তবে মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বা নির্বাচন থেকে নির্দিষ্ট দলকে বাদ দেওয়ার নেতিবাচক প্রবণতা একটি ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাইলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হবে কেন? বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ অপরাধ করেনি, করেছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের গণহত্যাসহ সব অপকর্মের বিচার হওয়া উচিত সবার আগে। এরপর রাজনৈতিক চর্চায় দলটি ফিরলে দেশের জনগণই সব অপকর্মের জবাব দেবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। যখন একটি দল আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর খুব বেশি নির্ভর করে, তখন এটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং গণদাবিগুলি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দলটির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো জনগণের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কমে যাওয়া।’

 

আওয়ামী লীগ অদূর ভবিষ্যতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে কিনা তা অনিশ্চিত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলটি রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পাবে কিনা তা নির্ভর করছে জনগণ তাদের কিভাবে গ্রহণ করে।’

 

১৪ নভেম্বর রংপুরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনাদের নেতারা আপনাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আপনারা অনুশোচনা করুন। জনগণের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চান। আমাদের দেশের জনগণ খুবই আবেগপ্রবণ, তারা ক্ষমাও করতে পারেন। এরপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিয়েন।’

 

এদিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব নেতা যারা গণহত্যা, গুম, খুনে জড়িত তাদের বিচার হোক, বিএনপি সেটা চায়। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

 

সূত্র বলছে, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তরা যাতে কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফিরতে না পারে সেজন্য বিএনপি জনসচেতনা গড়ে তুলবে। অন্তর্বর্তী সরকার হত্যা, গুম, দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। যদি না পারে, বিএনপি সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অপরাধের বিচার করবে।

 

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক তদন্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শাসনামলের সব অপকর্ম ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।’


প্রিন্ট