আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরে আমণ ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন, তবে এবার আশাব্যঞ্জক ফলন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোপণের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং সার সংকটের কারণে কৃষকরা কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। তবে বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলেও, ফলন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক আমনখেতের ধান গাছ নুইয়ে পড়ে। এ কারণে বর্তমানে কাটা ধানগুলোর ফলন হচ্ছে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ, যেখানে খাড়া অবস্থায় থাকা ধানের ফলন ১৬ থেকে ১৮ মণ পর্যন্ত হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আশা অনুযায়ী ফলন না হওয়ায় কৃষকরা হতাশ
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে তানোর উপজেলায় আমণ ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২,৬৩৫ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ২৮ হেক্টর, উফশী জাত ২২,১১৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। এছাড়া, চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০,২৯৮ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, তানোরে ধানের চাহিদা প্রায় ২০৫ মেট্রিক টন, ফলে প্রায় ৪৬,৬৭৫ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত থাকবে।
বৃষ্টির অভাবে চাষীদের দুর্ভোগ
উপজেলার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মদ জানান, রোপা-আমণ রোপণের সময় কৃষকদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। বৃষ্টির পানি সময়মতো না পাওয়ায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছিলেন, আর সার সংকটও ছিল তীব্র।
উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষক তমিজ উদ্দিন জানান, তার ধান কাটা শুরু হলেও মাড়াই এখনও হয়নি। তিনি বলেন, “ধানের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবার ফলন কম হবে।” একই রকম মতামত জানিয়েছেন কৃষক আয়ুব আলী ও আব্দুল, যারা ৫ বিঘা জমিতে আমণ চাষ করেছেন। তারা জানান, গত অক্টোবরের মাঝামাঝি ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিতে জমির ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে, ফলে এবার ফলন কম হবে।
কৃষি কর্মকর্তা আশাবাদী
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ জানিয়েছেন, রোপণের সময় বৃষ্টির অভাবে কিছুটা দেরি হলেও পরবর্তীতে সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তিনি বলেন, “এবার ধানখেতে রোগ বালাই কম ছিল এবং যেখানেই রোগের সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেখানেই দ্রুত পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। একাধিক মাঠ দিবস এবং অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে প্রতিকারও নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়োপযোগী বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জমিতে আমণের চাষ হয়েছে। সরকারীভাবে বীজ, সার এবং অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, ফলে ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি।”
প্রিন্ট