ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার
বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন কুষ্টিয়ার জগতিতে আন্তঃনগর ট্রেন থামানো এবং স্টেশন আধুনিকায়নসহ ছয়টি দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার কিছু আগে কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়। পরে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে সন্ধ্যা ছয়টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
বিক্ষোভের কারণ ছিল, স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, জগতি স্টেশনে মেইল ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে হবে। স্থানীয়রা জানান, অন্যথায় তারা বেনাপোল এক্সপ্রেসকে জগতি স্টেশন অতিক্রম করতে দেবেন না।
শুক্রবার বিকেল চারটায় জগতি স্টেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। সভা চলাকালে যখন ট্রেনটি স্টেশনটি পার করার চেষ্টা করছিল, তখন স্থানীয়রা ট্রেনটি আটকে দেন। তাদের দাবি ছিল:
১. জগতি রেলভবনের সংস্কার করতে হবে।
২. জগতি রেলস্টেশনকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
৩. প্রথম রেলস্টেশন হিসেবে এই এলাকায় সকল যাত্রীর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. জগতি স্টেশনের টিকিট অনলাইনে কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. জগতি স্টেশনের প্রথম রেলভবনকে প্রত্নতাত্ত্বিক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. জগতি রেলস্টেশনের পুরোনো ভবনের ছবি অনলাইন টিকিটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
রেল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রেন আটকে দেওয়ার ১০ মিনিট পর থেকেই রেল কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠক করতে শুরু করেন। রেলওয়ের খুলনা বিভাগের গার্ড (গ্রেড-২) এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মাহবুব ইসলাম বলেন, “কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলো শোনার পর সেগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছে।”
জগতি রেলস্টেশন: ইতিহাস ও আধুনিকায়নের দাবি
১৮৪৪ সালে আর. এম. স্টিফেনসন কলকাতার কাছে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেন, যা ১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে রানাঘাট পর্যন্ত বর্ধিত হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন চালু হলে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন, জগতি।
কিন্তু, আধুনিকায়নের জন্য বহুদিন ধরে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই স্টেশনটি এখন অবহেলিত। দেড়শ’ বছরের পুরনো এই স্টেশনটি এখন প্রায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। এক সময় যেখানে সারাদিন ছিল কর্মচাঞ্চল্য, এখন আর কোনো ট্রেন থামে না এবং স্টেশনটি দর্শকদের জন্য একটি নিস্তব্ধ স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগ এই স্টেশনটির আধুনিকায়ন এবং জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয়রা মনে করেন, এই স্টেশনটি পুনরুজ্জীবিত হলে কেবল জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে নয়, বরং পর্যটন এবং স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রিন্ট