মোঃ নূর ই আলম (কাজী নূর):
বাংলা কবিতায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ কাজী নজরুল ইসলাম। মানবতার জন্য তার জোরালোতম উচ্চারণ ‘আমি সাম্যের গান গাই’। তিনি সমগ্র মানব জাতির কবি। সাম্যের কবি, প্রেমের কবি, তিনি বিদ্রোহী কবি। যৌবনের দূত। নজরুলের কবিতায় নির্যাতিত মানুষের কথা বারবার ফুটে উঠেছে। কুলি, মজুরি থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য সকল সময়ের প্রাসঙ্গিকতা তার কবিতা ফুটে উঠেছে। তাই নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক। অনবদ্য কীর্তির মাঝে বেঁচে থাকবেন নজরুল। নজরুল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে লিখেছেন, মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির, কাবা নেই। সাম্যবাদী চিন্তাকে লালন করে তিনি তার মানসলোকে মানবসত্তার জন্ম দিয়েছিলেন। যা হিন্দু ও মুসলিম সম্পর্কের বিভাজক না হয়ে উঠেছিলো সম্প্রীতির এক অনন্য বাহক। তিনি মানবসভ্যতার বিকাশে লিখেছিলেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
.
নজরুলের সৃষ্টি, তার সাহিত্য কর্ম আরো গবেষণা ও অনুবাদ করার প্রয়োজন। তবেই আগামী প্রজন্ম তার সাহিত্য থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ- বিএসপি যশোরের উদ্যোগে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ এসব কথা বলেন।
.
শুক্রবার (২৩ মে) বিকেল ৪ টায় যশোর ইন্সটিটিউটের বি. সরকার (বিশ্বেস্বর সরকার) ঘূর্ণায়মান মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আছাদুজ্জামান। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. রুবেল আনছার। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও গবেষক নাঈম নাজমুল, সহকারী অধ্যাপক কবি মঞ্জুয়ারা সোনালী।
.
বক্তারা আরো বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম একমাত্র কবি যিনি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে এমন এক সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি হিসেবে নজির রাখতে পেরেছেন তিনি মুসলমানদের জন্য এমন গান গজল লিখেছেন যা ইসলামের অনেক পণ্ডিতও লিখতে পারেননি। এমন কি তিনি হিন্দুদের জন্য যেসব শ্যামা সংগীত লিখেছেন আর কেউ তেমন কোনোদিন লিখতে পারেনি।
.
বিএসপির সভাপতি কবি আহমদ রাজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি গোলাম মোস্তফা মুন্না। অনুষ্ঠানে যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন শিক্ষার্থী আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। কবিতা পাঠ করেন কবি আবু দাউদ মোসলেহ উদ্দিন রতন, আবুল হাসান তুহিন, আহমেদ মাহবুব ফারুক, কাজী নূর।
.
অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তি শিল্পী জাহিদুল যাদু, অরুন মজুমদার, অরুণ বর্মন ও ফাতিমা পারভীন।
.
ক বিভাগে কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম স্থান আলিশা তাবাসসুম, দ্বিতীয় স্থান সাফওয়ান উজ জামান মন ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে মালিহা তাসনিম।
.
খ বিভাগে কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম স্থান জুবাইয়া রাসেল জয়া, দ্বিতীয় স্থান রুকাইয়া তাসনিম এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে খান নাজিফা কবির। অনুষ্ঠানে প্রতি বিভাগে প্রথম ১০ জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি ভদ্রাবতী বিশ্বাস ও সঞ্জয় নন্দী।
প্রিন্ট