মোঃ আলম মৃধাঃ
নরসিংদীতে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সংঘটিত হয় এক ভয়াবহ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যা ইতিহাসে “জুলাই গণহত্যা” নামে পরিচিত। এদিন তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) মুস্তাফিজুর রহমান, ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) ওসি খোকন চন্দ্র সরকার এবং নরসিংদী মডেল থানার ওসি তানভীর আহমেদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ও নির্দেশে সাধারণ ছাত্র, জনতা এবং পথচারীদের উপর গুলি চালানো হয়। এই নির্মম হামলায় প্রাণ হারান ২০ জনেরও বেশি নিরীহ মানুষ।
ঘটনাপ্রবাহ:
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ১৮ জুলাইয়ের ঘটনাস্থলে কোন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যা গুলি চালানোর জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারত। তবুও পুলিশ সুপারের নির্দেশনা পেয়ে, বিনা উসকানিতে এবং অমানবিক ভাষায় গালিগালাজ করে ওসি তানভীর তার কনস্টেবলদের গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওসি তানভীর চিৎকার করে বলেন, “তোদের পিস্তলে কি গুলি নাই? শালারারে গুলি কর।” অন্যদিকে নরসিংদী ডিবির ওসি খোকন চন্দ্র সরকার তার ফোর্সদের গুলি করার হুকুম দেন। পুলিশ এবং ডিবির যৌথ অভিযানে এই নিশংস হত্যাযজ্ঞ চলে।
দোষ চাপানো হয় ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর:
হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে পুলিশ প্রশাসন কৌশলে দায় চাপিয়ে দেয় নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর। প্রকৃতপক্ষে, সেদিন কোনও ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং গুলি চালানোর মত কোনো বৈধ আদেশও প্রদান করা হয়নি। বরং ঘটনার পর পুলিশের চাপের মুখে ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে পরে গুলি চালানোর অনুমতির মিথ্যা প্রমাণ আদায় করে নেয়া হয়।
দোষীদের বর্তমান অবস্থা:
এসপি মুস্তাফিজুর রহমান ও ডিবির ওসি খোকন চন্দ্র সরকারের ভারত পালিয়ে যাওয়ার তথ্য জানা গেছে।
ওসি তানভীর আহমেদ বর্তমানে টুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে রয়েছেন, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে এসপি ও ডিবি ওসির উপস্থিতি এবং তাদের নেতৃত্বে গুলির নির্দেশনার ভিডিওচিত্র এখনো সাংবাদিকদের হাতে রয়েছে।
নরসিংদীর ১৮ জুলাই গণহত্যা একটি পরিকল্পিত এবং নির্মম হত্যাযজ্ঞ, যেখানে আইনের রক্ষকেরাই পরিণত হয়েছিল খুনিতে। আজও ন্যায়বিচার অধরা থেকে গেছে। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানই পারে এই জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।
প্রিন্ট