বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছি। হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, তবে তাদের দোসররা এখনো সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে, এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সময় ও সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। এজন্য নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যের সুযোগে যেন ফের স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। যারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদের বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের কারিগর তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোর মুনশি মেহেরুল্লাহ ময়দানে (টাউন হল) এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ যে কয়েকজন রাজনীতিবিদের সততা, কর্মযজ্ঞ, জনকল্যাণে ব্যাপক অবদান ও ব্যক্তিত্বের জন্য প্রশ্নহীনভাবে গর্ববোধ করতে পারেন, তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম অন্যতম। ক্ষণজন্মা এই রাজনীতিক যতদিন বেঁচে ছিলেন, মানুষের অধিকার নিশ্চিতের জন্য লড়াই করেছেন। সারাজীবন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। আর এ কারণে তাকে জীবনে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। বারবার মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে, তারপরও তিনি আদর্শের প্রশ্নে কারো কাছে মাথা নত করেননি। দলের দুঃসময়ে তার অবদান ভুলবার নয়। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও শিষ্টাচার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে ধীরে ধীরে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বহুবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপরও তিনি শেকড়ের কথা ভুলে যাননি। তৃণমূলের মানুষের সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। আমিও তরিকুল ইসলামের এই গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূলের সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। কারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য এই যোগাযোগের কোন বিকল্প নেই।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “তরিকুল ইসলামের সাথে আমার কাজ করার বেশি অভিজ্ঞতা নেই। তবে যতটুকু সময় পেয়েছি, ততটুকু সময়ে আমি তার কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আমি ও মরহুম তরিকুল ইসলাম একসাথে কারাবরণ করেছি। একদিন পিজি হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য তার সাথে দেখা হয়েছিল এবং খুব সামান্যই কথা হয়েছিল। জীবনে প্রথম কারাবরণ করায় আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, আমাকে দেখে তরিকুল ইসলাম সাহেব বললেন, ‘তারেক, বুকে সাহস রাখো, নিজেকে শক্ত রাখো, ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সেই কথা শুনে আমি কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “রাজনীতি করার কারণে তরিকুল ইসলামকে এরশাদ সরকারের আমলে কিছুদিন গুম করা হয়েছিল। তারপর তিনি বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। বহু মিথ্যা মামলায় তাকে আটক করে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে তিনি ততোই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতি অটুট ও অবিচল থেকে মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার একজন বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন।”
তারেক রহমান আরো বলেন, “আজকের এই স্মরণসভায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে মরহুম তরিকুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। বিএনপি অন্য মাত্রায় তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে। বিশেষ করে ২০১৩-২০২৪ সালের আন্দোলনে তরিকুল ইসলামের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শান্তিময় ঐতিহাসিক যশোরের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তরিকুল ইসলাম।”
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। এই সংস্কারের প্রস্তাব প্রথম দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি সবসময় সংস্কারের পক্ষে কথা বলেছে। তবে সেই সংস্কার মানে সংবিধানে কয়েকটি শব্দ যোজন-বিয়োজন করলেই সেটা পরিবর্তন নয়। সংস্কার বলতে সেটাই বুঝি, যে সংস্কার করলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। যে সংস্কার করলে বেকার সমস্যা সমাধান হবে। যে সংস্কার করলে নারীদের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে দেশের সন্তানেরা শিক্ষা পাবে। যে সংস্কার করলে কিঞ্চিৎ হলেও দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আমি সেই বিষয়গুলোকেই সংস্কার বলছি।”
এ সময় তারেক রহমান আরো বলেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়নের মাধ্যমে যে বিপ্লব হয়েছে, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে।” দলের নেতাকর্মীরা যারা দীর্ঘদিন নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন, তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সন্তান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। অনুষ্ঠান শেষে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাবার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের প্রতি দোয়া প্রার্থনা করেন।
স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা টি এস আইয়ুব, জেলা বিএনপির সদস্য ও যশোর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন আজাদ, ডাঃ হারুন অর রশীদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেড এম সালেক, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, বড় ছেলে শান্তুনু ইসলাম সুমিত, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খাঁন, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একে শরফুদ্দৌলাহ ছোটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট জাফর সাদিক, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সেক্রেটারি মোস্তফা আমির ফয়সাল, এমদাদ শাওন, খাইরুল আলম রূয়েল প্রমুখ।
প্রিন্ট