রাজশাহীর তানোর উপজেলার স্বশিক্ষিত ও বরণ্যে কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ আন্তর্জাতিক কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়া গমন করেছেন। ৪ নভেম্বর, সোমবার, তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন এবং ৬ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
জানা গেছে, নূর মোহাম্মদ রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া-নামপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ না থাকলেও তিনি ধান নিয়ে একের পর এক নতুন উদ্ভাবন করছেন। সংকরায়ণের মাধ্যমে তিনি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে। তার উদ্ভাবিত ধান জাতগুলো জাত হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে। নূর মোহাম্মদ এখন মালয়েশিয়ায় ‘কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে’ অংশ নিতে যাচ্ছেন। পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (প্যানাপ) তাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
স্বশিক্ষিত নূর মোহাম্মদ দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি বরেন্দ্রভূমিতে খরা-প্রবণ অঞ্চলে ধানের আবাদ নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজের মাটির ঘরটিকে গবেষণাগারে পরিণত করে ধান সংকরায়ণ শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনি ২০০টিরও বেশি নতুন ধানের কৌলিক সারণি উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর উদ্ভাবিত এক ধানের নাম এনএমকেপি-৫, যা খরাসহিষ্ণু এবং ১৩০ দিনে কাটা যাবে। তিনি এর ফলন ২৫ মণ পর্যন্ত অর্জন করেছেন এবং এটি রোপা আমন মৌসুমেও হয়ে থাকে। এ ধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের শুরুতে তোলা যায়, ফলে সেচের খরচ কম হয় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।
এছাড়া, তিনি দেশের প্রচলিত ধানের জাতগুলোর জীবনকাল কমিয়ে এবং খরাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত জাতগুলো, বিশেষ করে এনএমকেপি-১ থেকে এনএমকেপি-৫, দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি খাতে সফলতার জন্য তিনি ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে সেরা কৃষি উদ্ভাবনের জন্য তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার লাভ করেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের কাজকে তুলে ধরতে মালয়েশিয়া গমন করছেন।
প্রিন্ট