ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য দেখিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা বিজয়ী দলের খেলোয়াড় নিলুফা ইয়াসমিন নীলা এখন কুষ্টিয়াবাসীর গর্ব ও অহংকার। এই নারী খেলোয়াড় সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে কুষ্টিয়াবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
নিলুফা ইয়াসমিন, যিনি ‘নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৪’ জয়ী দলের সদস্য, হতদরিদ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি কুষ্টিয়ার মাটিতে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সামাজিক কুসংস্কারকে অতিক্রম করে লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবলে সাফল্য অর্জন করেন।
ছোটবেলায় নিলুফার বাবা রিকশাচালক ছিলেন, যিনি পরিবার ছেড়ে চলে যান। এরপর তার মা, বাছিরন আক্তার, দুই মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় আশ্রয় নেন এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি শুরু করেন। মায়ের ইচ্ছা ছিলো মেয়ে দুটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
নিলুফা স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন খেলায় সাফল্য দেখাতে শুরু করেন। তিনি চাঁদ সুলতানা স্কুল থেকে এসএসসি এবং মিরপুর উপজেলার আমলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কুষ্টিয়ার আরেক কৃতি সন্তান আবু ফাত্তাহ, যিনি ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা, নিলুফার ফুটবল খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে উৎসাহ দেন এবং ঢাকায় প্রশিক্ষণের জন্য সহযোগিতা করেন। নিলুফা থেমে থাকেননি; তিনি খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যান।
নিলুফা সম্প্রতি ফুটবলে সাফল্য দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ পুরস্কারও পেয়েছেন। সেই অর্থ দিয়ে তিনি জমি কিনে নতুন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া পৌরসভার জুগিয়া এলাকায় বসবাস করছেন।
নিলুফার মা বাছিরন আক্তার বলেন, “আমার মেয়ে জাতীয় দলে ফুটবলার, এ কথা অনেকেই জানতেন না। কিন্তু এখন সে সবার গর্ব। আমি চাই সে আরো ভালো কিছু করুক এবং দেশের সুনাম বৃদ্ধি করুক।”
নিলুফা বর্তমানে ঢাকায় দলের সঙ্গে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় টিভিতে ফুটবল খেলা দেখে আগ্রহ জন্মে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ফুটবল খেলায় নাম লেখানোর পর থেকে ধাপে ধাপে আমি জাতীয় দলে অংশগ্রহণ করেছি।”
গত ৩০ অক্টোবর কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন করে।
নিলুফার নানী রোকেয়া বেগম বলেন, “আমরা নীলার জন্য খুশি। সে আমাদের দেশের সম্পদ। আমি তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।”
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সচিব আব্দুর রহিম বলেন, “নিলুফা ইয়াসমিন আমাদের এলাকার মেয়ে। আমরা তার জন্য গর্ববোধ করছি। নিলুফা গ্রামে ফিরলে আমরা সংবর্ধনা দেবো।”
প্রিন্ট