বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে উঠা নিজস্ব প্রানের ঐশ্বর্যে ভিন্নতর আঞ্চলিক পরিচয়ে চিহ্নিত পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, কুমার ও ভূবেনশ্বর নদী বিধৌত প্রাচীন জেলা শহর ফরিদপুর। জেলার প্রায় সমগ্র অঞ্চলটি এক সময় ছিল চর প্রধান। ক্রমান্ময়ে এখানে বসতির সৃষ্টি হয়। এতদ্বাঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ,ধর্মীয় সামগ্রিক উন্নয়ন তথা প্রাকৃতিক ও মানবিক বোধ বিকাশের ঐশ্বর্য মন্ডিত ভূমিকায় ছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলী। ভূ-প্রভাবে এতদাঞ্চলের মানুষের স্বভাব চরিত্র গড়ে উঠে নম্রতায়; তবে সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে প্রতিবাদী আচরনেরও কোন কমতি ছিল না।
স্বদেশ প্রেম ও স্বদেশী চিন্তায় নিমগ্ন এ জেলার বিপুল সংখ্যক জনতা অনাদিকাল থেকেই ছিল চাপিয়ে দেয়া শাসন ব্যবস্থা বিরোধী।এ মনোভাবেই ব্রিটিশ শাসনের বিপক্ষে এ এলাকাতে গড়ে উঠেছিল বিপুল জাগরন। পাকিস্তানীদের দুর্বিসহ অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠে বাংলাদেশের সৃজন করেছিলেন এ পবিত্র ভূমিরই (বৃহত্তর ফরিদপুর) শ্রেষ্ঠ সন্তান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর হাতেই জন্ম হয় বাংলাদেশের।
এ জেলার সোনালী আঁশ পাট জগত বিখ্যাত। কালো সোনা নামে খ্যাত পেয়াজ বীজেরসিংহ উৎপাদনের তালিকায় এ জেলারই অবস্থান। দেশের প্রথম জিরা মসলা উৎপাদনে এ জেলার সন্তানেরাই ভূমিকা রেখেছে। জেলায় বসতির শুরু থেকেই নানা পেশা জীবির মধ্যে কৃষকদের প্রাধান্য ছিল।
শিক্ষা গ্রহণে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তও উদ্বুদ্ধ করতে জেলার পূর্বসূসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নওয়াব আব্দুল লতিফ, হাফেজ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ময়েজউদ্দিন বিশ্বাস,অম্বিকাচরণ মজুমদার, রমেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী, মহিন সাহা, চন্দ্র কান্ত নাথ, হুমায়ন কবির, এএফ মুজিবুর রহমান প্রমুখের ব্যক্তিবর্র্গের অদম্য প্রচেষ্টা ছিল। সেই প্রচেষ্টারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময় পর্যন্ত চলে এসেছে। ফরিদপুর জিলা স্কুল, ফরিদপুর গভমেন্ট গার্লস স্কুল, তারার মেলা আধুনিক শিশু বিদ্যালয়, সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বশেষ ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ কঠোর মান নিয়ন্ত্রন আর নিবিড় তদারকিতে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনিত হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের প্রথম কয়েকটি জেলার মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় ফরিদপুরে তখন জরুরী ভিত্তিতেফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল এবং বাংলায়আমার ঘরে আমার স্কুল চালু করা হয়। এরফলে ফরিদপুরে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকাংশেই স্বাভাবিক রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল-মে মাস থেকে গৃহীত ফরিদপুরের এই কার্যক্রম খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং তা পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া শিক্ষার আলোকবর্তিকা সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেআমার গ্রাম আমার শহর-ফরিদপুর হবে শিক্ষা নগর স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী ও অনন্য উদ্যোগমিট দ্য ডিসি। এটি মূলত ফরিদপুর জেলা সদরে পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে জেলা প্রশাসকের সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্র।
ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ ও সমাজে বিশেষত শিক্ষার্থীদের মাঝে সুস্থ ধারার মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিমাসে জেলাতে জেলা প্রশাসকের সাথে এবং উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপভাবে শিক্ষার্থী বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাথে এই কর্মসূচি যথাক্রমে ‘মিট দ্যা ডিসি’ ও ‘মিট দ্যা ইউএনও’ নামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তাছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলা এবং সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হচ্ছে একটি গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও গ্রন্থের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় বন্ধন যার সফল প্রয়োগ ঘটেছেআট আনায় জীবনের আলো কেনা শীর্ষক একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ফরিদপুর জেলায় গ্রন্থ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
ফরিদপুরে অধ্যয়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে তাদের সঞ্চিত টিফিনের অর্থ হতে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় মাসে মাত্র ৫০ পয়সা (আট আনা) নিয়ে এই গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অনুভব করতে সক্ষম হচ্ছে যে তাদের সামান্য অর্থের বিনিময়ে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। এই কার্যক্রমটিকে স্থায়ীরূপ দেয়ার জন্য “জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট” নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে প্রতিবছর গ্রন্থমেলার আয়োজন, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।
দ্রুত কার্যকরী তথা আধুনিক চিকিৎসা সেবা বিস্তারে অতীতের কর্মপ্রচেষ্টার সফল চিত্র বর্তমানে ফরিদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২৫০ বেড থেকে ১ হাজার বেড এ উন্নীত করা হয়েছে। অন্যান্য হাসপাতালের সেবা প্রদান অব্যহত রয়েছে। জেলার সালথা উপজেলায় অত্যাধুনিকমানের ৫০ বেডের একটি হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিবৎসা সেবার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে শিশু ও মায়ের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে এ জেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে এসে ডাঃ জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল, ডায়বেটিক রোগীদের জন্য ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, দৃষ্টির প্রখরতা অব্যহত রাখার প্রত্যয়ে চক্ষু হাসপাতালসহ বিভিন্ন মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে চর প্রধান ফরিদপুরের যাতায়াতের জন্য নৌযান প্রধান বাহন ছিল। সময়ের পরিক্রমায় আজ সে স্থান দখল করেছে সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফরিদপুর থেকে নিয়মিত ট্রেন চলাচল এ জেলাবাসীর সাথে অন্যান্য জেলার দুরত্ব কমিয়ে এনেছে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার পুরো চিত্র বদলে দিয়েছে। ভাঙ্গা উপজেলা অংশে যে অত্যাধুনিক সড়ক দৃশ্যমান; তা কখনো কল্পনায়ও ছিল না।
প্রাচীনকালের পালোয়ানগিরি প্রতিযোগিতায় যেসব জেলার প্রতিযোগীদের নাম থাকত ফরিদপুর তার মধে্য অন্যতম। দেশীয় নানা রকম খেলাধূলায় অভ্যস্ত ছিল ফরিদপুরবাসী। কুস্তিগিরি, হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধা, নৌকা বাইচ, দাবা খেলা ইত্যাদি নানা রকম প্রতিযোগিতা প্রাচীন কাল থেকেই ফরিদপুরে বিরাজিত ছিল।দেশীয় ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধূলার পাশাপাশি আধুনিক সময়ে ফুটবল, ক্রিকেট খেলায়ও ফরিদপুরবাসী পারদর্শী। বর্তমান সরকারের খেলাধূলায় ফরিদপুরবাসীর আগ্রহ ও পারদর্শীতা লক্ষ্য করে ফরিদপুরে জাতীয়মানের একটি বৃহৎ স্টেয়িাম, একটি মিনি স্টেয়িাম করা হয়েছে।
মৌল মানবিক চাহিদার অন্যতম বিনোদন। সময়ের পরিবর্তনশীলতার সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের পদ্ধতিও পরিবর্তন হয়। ফরিদপুরবাসীর বিনোদনের দিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যে ফরিদপুরে শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্ক করা হয়েছে, যা এই জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার শিশু কিশোরের পাশাপাশি বড়দেরও বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। প্রমত্না পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে ফরিদপুরবাসীকে রক্ষাকল্পে পদ্মা নদীর পাড়ে ব্লক দেয়া হয়েছে, যা একদিকে যেমন পদ্মার ভাঙ্গন রোধ করেছে অন্যদিকে ফরিদপুরবাসীর বিনোদনের অন্যতম স্থানে পরিনত হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। পাট ও পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্যের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করে পাটকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করা, পাটচাষী ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে ফরিদপুর জেলায় আয়োজিত হয় মাসব্যাপীব্র্যান্ডিং মেলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকীমুজিববর্ষকে উপজীব্য করে জেলার সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গনে আয়োজিত এই মেলায়বঙ্গবন্ধু কর্ণার, ব্র্যান্ডিং কর্ণার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, প্রতিবন্ধিদের জন্যসুবর্ণ নাগরিক কর্ণার, এসডিজি কর্ণারসহ মোট ১২০টি স্টল অংশগ্রহণ করে।
তাছাড়া বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার প্রভাবে অনেক মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে স্থানীয় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন কর্মে মেতে ওঠে। তারা স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ ঘরে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে এবং তা অনলাইনের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসার সাথে সাথে দুই গ্রুপে প্রায় চার শতাধিক উদ্যোক্তার সাথে মিলিত হন এবং তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক আশার আলো সঞ্চারিত হয় এবং তারা তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আরো বেগবান করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে উঠেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকীমুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অঙ্গীকার ‘মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ বাস্তবায়নে ফরিদপুর জেলার ২ হাজার জন ভূমিহীনকে ৩২৩ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫৫৫ জন ভূমিহীনকে ৭৮ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াওমুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১ হাজার ৭১টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অগ্রাধিকার প্রকল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এ জেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে । ইতোমধ্যে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত (ভূমিহীন ও গৃহহীন) উপকারভোগীদের জন্য ১হাজার ৪৭০ টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে; বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও শেষ হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদের মধ্যে জমি ও ঘর হস্তান্তর করা হবে।
মুজিববর্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় অথবা উপজেলা পরিষদকে ঘিরে মুজিববর্ষ পার্ক নামে দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। এর ফলে উপজেলা পরিষদে আগত সেবাপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে সেবা গ্রহণের পাশাপাশি একটি সুন্দর পরিবেশ উপভোগেরও সুযোগ হচ্ছে।
অনুরূপভাবে এ জেলার ৮১ টি ইউনিয়ন পরিষদে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অব্যবহৃত কোন কক্ষে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গণগ্রন্থাগার” নামে একটি করে লাইব্রেরি গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ০৮ টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। নির্মান সমাপ্ত হওয়া এসব গ্রন্থাগারে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থের সংস্থান রয়েছে।এতে করে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসু জনগণ সহজেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছে। এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিকাশের পথকে অধিকতর অবারিত করছে; একই সাথে মাদক, সন্ত্রাস ও ধর্মান্ধতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এবছর মুজিববর্ষে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে মেমোরিয়াল, স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যবাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর-এ একটি নান্দনিক ও শৈল্পিক কর্মসমৃদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্যালারী’ শিরোনামে একটি গ্যালারী সমাপ্তির শেষ পর্যায়ে; যেখানে ফরিদপুরের ইতিহাস ও রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত গ্রন্থসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশ বরেণ্য লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত গ্রন্থের এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার অডিও ও ভিজুয়াল উপস্থাপনার সন্নিবেশ ঘটানো হচ্ছে।
এই গ্যালারীর মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও জ্ঞানপিপাসু জনগণ একদিকে যেমন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে; অপরদিকে সচিত্র ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাণবন্ত প্রতিচ্ছবি পর্যবেক্ষণেরও সুযোগ পাবেন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং উক্ত গ্যালারীর একটি দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনও প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা। এই করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, জনসচেতনতা তৈরি, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সার্বিক কর্মকান্ড সুচারুভাবে সমন্বয় করার উদ্দ্যেশ্যে ফরিদপুরে ‘ফরিদপুর করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন’ শীর্ষক একটি ওয়েবসাইট প্রণয়ন করা হয়। এই ওয়েবসাইটে একদিকে যেমন মানবিক সহায়তা প্রাপ্ত এবং প্রাপ্তিযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে অপরদিকে এ জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, তাদের টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য, করোনা থেকে মুক্তি প্রাপ্তদের সংখ্যা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও হোমকোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়মিত আপডেট করে সংরক্ষন করা হচ্ছে।
এছাড়া, ডাটাবেজ প্রণয়নের মাধ্যমে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণের তথ্য-প্রমাণও নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। করোনায় সংক্রমিত অথবা মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এমন যেকোন ব্যক্তি তার বক্তব্য এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা ওয়েবসাইটে প্রদত্ত হটলাইনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছেন। উপজেলাভিত্তিক করোনা আক্রান্তদের তথ্য থাকায় কোন নির্দিষ্ট এলাকাবাসীও নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করে সে অনুযায়ী নিজেরা সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি এই ওয়েবসাইটটি ইতোমধ্যে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যে পরবর্তিতে অন্য যেকোন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিআর, কাবিটা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী রয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও সরকার তাৎক্ষণিক মানবিক সহয়তা প্রদান করে থাকেন। জেলা পর্যায়ে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।
সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, একই ব্যক্তি যাতে একাধিকবার সুবিধা প্রাপ্ত না হয় এবং উপযুক্ত ব্যক্তি যাতে কোনভাবেই সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর উপকারভোগীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিউআর কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে জেলার সকল উপজেলায় কিউআর কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল এবং করোনা আক্রান্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জেলার সকল সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী এবং ত্রাণ কার্যক্রমও পর্যায়ক্রমে এই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। (লেখকঃ সংবাদকর্মী)
প্রিন্ট