ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ফুলবাড়ী উপজেলায় মতবিনিময় সভা Logo তানোরে যাতায়াতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ Logo মাগুরাতে এসএমসি’র পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন Logo অর্থনৈতিক শুমারি উপলক্ষে স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo প্রত্যন্ত গ্রামে নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করলেন হাজারো দর্শক Logo বাঘায় উপজেলা শুমারি স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা Logo ফরিদপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কারাম উৎসবে মেতেছে ওরাঁও সম্প্রদায়

প্রতি বছরের মতে এ বছরেও সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ওরাঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আয়োজনে সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচ পীরডাঙ্গা গ্রামের ওরাঁও মহল্লায় কারাম উৎসব পালিত হয়।

 

ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষেরা বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর এই উৎসব পালন করে আসছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবে ওরাঁও সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে এনে স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা করেন। এরপর ঢাক-ঢোলের তালে তালে ও নাচে গানে গল্প বলার মধ্য দিয়ে শুরু করেন উৎসব। এ সময় পুরো এলাকা মুখরিত হয় কারাম উৎসবে। ওরাঁওরাসহ হিন্দু, মুসলিম মিলে প্রায় সব সম্প্রদায়ের ছোট বড় সকল বয়সের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় পাঁচ পীরডাঙ্গা গ্রাম।

 

কারাম একটি গাছের নাম। ওরাঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বাংলা ভাদ্র মাসের শেষে ও আশ্বিনের শুরুতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় এই গাছের ডালকে পূজা অর্চনা করেন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনি কেরকেটা বলেন, আমরা এখানে আদিকাল থেকে ও যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় কারাম পূজা ও উৎসব করে আসছি। মূলত বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ার কামনায় এই পূজা আমরা করে থাকি।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান চৌধুরী বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষদের বড় উৎসব হচ্ছে এই কারাম উৎসব। এই সম্প্রদায়ের মানুষরা মনে করে কারাম গাছের ডাল যুগে যুগে তাদেরকে বিপদ-আপদ থেকে শুরু করে মহাপ্রলয় হতে রক্ষা করে। যার কারণে ভাদ্র মাসের শেষ দিন ও পহেলা আশ্বিনে তারা এই উৎসব পালন করেন। এখানে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এই অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই উৎসবে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেন। এটি এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহ অবস্থানের একটা সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

 

উদীচী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু বলেন, আমি এই উৎসবে প্রতি বছরই আসি। এবারও এসেছি। এসে তাদের উৎসবে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। কারাম উৎসব একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই দিনে ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের ধর্মীয় কাজসহ নাচে গানে উৎসব উদযাপন করেন। এটি একটি অত্যন্ত চমৎকার আয়োজন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র তাই আমি চাই রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে উৎসবটি যেন ভবিষ্যতে প্রতিবছর আরও বড় পরিসরে পালন করা হয়।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান জানান, আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতো। আর সেই গাছ একদিন কর্মা তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তখন নানা বিপদ-আপদ ও অভাব দেখা দিলে আবার সেই গাছ খুঁজে আনা হয়। তখন থেকে সেই গাছকে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় ক্ষতির সম্মুখিন হন। তখন থেকেই বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মূলত কারাম পূজা করা হয়।

স্থানীয়সহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত কারাম  উৎসব দেখতে আসা মানুষেরা জানান, একই রঙের পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে গ্রামের নারী পুরুষরা ঢোলের তালে তালে কারামের নৃত্য পরিবেশন দেখে তারা আনন্দিত ও খুশি ।

 

এ সময় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেউকেটার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

উৎসবে ঢাক-ঢোলের বাজনায় নাচে গানে আনন্দ উপভোগ করে আদিবাসীদের পরিবার ও স্বজনরা। সঙ্গে যোগ দেন শিশু কিশোররাও।

 

 

পূজা অর্চনা শেষে গ্রামের তরুণ-তরুণীরাসহ সব বয়সের নারী-পুরুষরা বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আবারও ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দিয়ে এ বছরের মতো শেষ করবেন কারাম উৎসব।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

error: Content is protected !!

কারাম উৎসবে মেতেছে ওরাঁও সম্প্রদায়

আপডেট টাইম : ০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতনিধি :

প্রতি বছরের মতে এ বছরেও সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ওরাঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আয়োজনে সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচ পীরডাঙ্গা গ্রামের ওরাঁও মহল্লায় কারাম উৎসব পালিত হয়।

 

ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষেরা বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর এই উৎসব পালন করে আসছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবে ওরাঁও সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে এনে স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা করেন। এরপর ঢাক-ঢোলের তালে তালে ও নাচে গানে গল্প বলার মধ্য দিয়ে শুরু করেন উৎসব। এ সময় পুরো এলাকা মুখরিত হয় কারাম উৎসবে। ওরাঁওরাসহ হিন্দু, মুসলিম মিলে প্রায় সব সম্প্রদায়ের ছোট বড় সকল বয়সের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় পাঁচ পীরডাঙ্গা গ্রাম।

 

কারাম একটি গাছের নাম। ওরাঁও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বাংলা ভাদ্র মাসের শেষে ও আশ্বিনের শুরুতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় এই গাছের ডালকে পূজা অর্চনা করেন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনি কেরকেটা বলেন, আমরা এখানে আদিকাল থেকে ও যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় কারাম পূজা ও উৎসব করে আসছি। মূলত বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ার কামনায় এই পূজা আমরা করে থাকি।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান চৌধুরী বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষদের বড় উৎসব হচ্ছে এই কারাম উৎসব। এই সম্প্রদায়ের মানুষরা মনে করে কারাম গাছের ডাল যুগে যুগে তাদেরকে বিপদ-আপদ থেকে শুরু করে মহাপ্রলয় হতে রক্ষা করে। যার কারণে ভাদ্র মাসের শেষ দিন ও পহেলা আশ্বিনে তারা এই উৎসব পালন করেন। এখানে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এই অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই উৎসবে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেন। এটি এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহ অবস্থানের একটা সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

 

উদীচী ঠাকুরগাঁও জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু বলেন, আমি এই উৎসবে প্রতি বছরই আসি। এবারও এসেছি। এসে তাদের উৎসবে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। কারাম উৎসব একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই দিনে ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের ধর্মীয় কাজসহ নাচে গানে উৎসব উদযাপন করেন। এটি একটি অত্যন্ত চমৎকার আয়োজন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র তাই আমি চাই রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে উৎসবটি যেন ভবিষ্যতে প্রতিবছর আরও বড় পরিসরে পালন করা হয়।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান জানান, আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারাম গাছকে পূজা করতো। আর সেই গাছ একদিন কর্মা তুলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তখন নানা বিপদ-আপদ ও অভাব দেখা দিলে আবার সেই গাছ খুঁজে আনা হয়। তখন থেকে সেই গাছকে বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় ক্ষতির সম্মুখিন হন। তখন থেকেই বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মূলত কারাম পূজা করা হয়।

স্থানীয়সহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত কারাম  উৎসব দেখতে আসা মানুষেরা জানান, একই রঙের পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে গ্রামের নারী পুরুষরা ঢোলের তালে তালে কারামের নৃত্য পরিবেশন দেখে তারা আনন্দিত ও খুশি ।

 

এ সময় পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেউকেটার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

 

উৎসবে ঢাক-ঢোলের বাজনায় নাচে গানে আনন্দ উপভোগ করে আদিবাসীদের পরিবার ও স্বজনরা। সঙ্গে যোগ দেন শিশু কিশোররাও।

 

 

পূজা অর্চনা শেষে গ্রামের তরুণ-তরুণীরাসহ সব বয়সের নারী-পুরুষরা বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আবারও ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দিয়ে এ বছরের মতো শেষ করবেন কারাম উৎসব।


প্রিন্ট