৬৩ বছর বয়সী চুন্নু শেখ ২৩ বছর ধরে রুটি বেচে বেশ ভালোভাবেই চালাচ্ছেন সংসার। স্ত্রী, ৬ ছেলে আর ১ মেয়ে নিয়ে চুন্নু শেখের সংসার। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, বড় ছেলেকে ঢাকায় কম্পিউটারের দোকান দিয়ে দিয়েছেন। আর বাকি ৫ ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। খেয়েদেয়ে ভালোই আছেন। রুটি বেচে আফসোসতো নেইই, বরং এ পেশায় থেকে তিনি গর্বিতও।
জানা যায়, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ঠাকুরপুর বাজারে চুন্নু শেখের রুটির দোকান এলাকায় ‘ঠাকুরপুরের রুটির দোকান’ হিসেবে পরিচিত। তবে চুন্নু শেখের দোকানতো নয় যেন পরিত্যক্ত গুদাম ঘর। সেই ঘরের বারান্দায় তৈরিকৃত চুলায় তিনি রুটি তৈরি করেন। সাহায্যকারী কেউ নেই, একাই সবকিছু করেন। রুটিও একটু ব্যতিক্রম। রুটির সাথে ডিম মামলেট একত্র করে ভেজে টুকরো টুকরো করে কেটে ভোক্তাদের পরিবেশন করেন।
অনেকটা মোগলাইয়ের মতো। দোকানে ক্রেতাদের বসারও কোন সুব্যবস্থা নেই। একটা বেঞ্চ আছে দোকানের সামনের রাস্তার অপর পাশে ফাঁকা জায়গায়। সেখানে বসে অনেকে খান। বসার সুব্যবস্থা না থাকায় অনেকে কাগজের উপর রুটি হাতে করে দাঁড়িয়েও খান। এতে ক্রেতাদের কোন অভিযোগ নেই। কারণ চুন্নু শেখের রুটির সুস্বাদ পেতে দূর দূরান্ত থেকেও ক্রেতারা আসেন। অর্ডার করার পর ক্রেতাদের সিরিয়াল অনুসরণ করে রুটি সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত তিনি রুটি তৈরি করেন। এসময় দুই কেজির মতো আটার রুটি তৈরি করেন। আর সন্ধ্যা ৭টার পর রুটি তৈরি শুরু করেন, চলে রাত ১/২ টা পর্যন্ত। এসময় ৪/৫ কেজি আটার রুটি করেন। প্রতি পিস ডিম-রুটির দাম ৩০ টাকা। প্রতিদিনের আয়ের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও অনুমান করা হয় খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ১২০০/১৩০০ টাকার মতো লাভ থাকে।
চুন্নু শেখ জানান, প্রতি কেজি আটার দাম ৪০ টাকা। এক কেজি আটায় ১৫টির মতো রুটি হয়। রুটির ব্যবসা করেই তিনি ফুল ওয়াল দিয়ে বাড়ি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, রুটি বেচে প্রতিদিন যা লাভ থাকে তার পরিমাণ বলতে পারবো না, তবে ৭ জন খেয়েদেয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে খুব ভালো আছি।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী লিটু সিকদার বলেন, মাঝে মাঝে আমি রাতে ঠাকুরপুরের রুটির দোকান থেকে রুটি খাই। বেশ ভালো। অনেকটা মোগলাইয়ের মতো। ছোটখাটো দোকানের মোগলাইয়ের চেয়ে চুন্নু শেখের রুটি-ডিমের কম্বিনেশন অনেক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর।