ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদকে তার বাসায় দেখতে যান যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত

গ্রামের বাড়িতে এসে গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদের বাসায় শনিবার দুপুরে (৩১-০৮-২০২৪) তাকে দেখতে যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। এসময় ওই সময়ের পরিস্থিতির বর্ননা শোনেন এবং চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেন। যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ও এলাকার শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে কৃতি সন্তান হিসেবে পরিচিত। গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক এলাহি বক্স ওরফে আফাং মিয়ার দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকার বনশ্রীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন রনি আহমেদ। বিজিবির ছোড়া গুলি তাঁর বাঁ পায়ের ঊরু ভেদ করে চলে যায় । রনি আহমেদ ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত । এখন রাজশাহীর বাঘায় গ্রমের বাড়িতে বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে তাঁর।

 

এ সময় তার সাথে ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন.বিএনপি নেতা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.ফিরোজ আহমেদ রনজু, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান,আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন,প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া ও রনি আহমেদের স্বজনরা।

ওই সময়ের ঘটনার বর্ননা দিয়ে রনি জানান, গত ১৯ জুলাই দুপুরে তিনি বাসায় ফেরার সময় দেখেন পুলিশ এসে গুলি করতে করতে চলে যাচ্ছে। নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে লোকজনকে বলেন ‘যখন ঘরে ঢুকে মারবে সেই দিন বুঝবেন।’ এরপর এ ব্লক, জি ব্লকসহ আশপাশের লোকজন একত্র করে রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। মাগরিবের আজান হবে–সেই মুহূর্তে ড্রোন এসে দেখে যায় কোন কোন ব্লকে লোকজন আছে। তারা রাস্তা ব্লক করে প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যান। ওপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে গুলি ছুড়ছে। পুলিশ-বিজিবি সোসাইটির মধ্যে ঢুকে অ্যাভিনিউ রোডে গুলি করা শুরু করল। নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য দূরে গেলেন রনি। সামনে ৪-৫ জন ছিল, গুলি লেগে তারা পড়ে গেলেন। তাদের লাশ নেওয়ার জন্য গুলি করতে করতে ধাওয়া করল পুলিশ।
সেই সময়কার পরিস্থিতি সম্পর্কে রনি বলেন, ‘ বিজিবির ছোড়া গুলি আমার বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বের হয়ে গেল। অনেক রক্তপাত হচ্ছিল। ভাবলাম আর বাঁচব না, কলেমা পড়া শুরু করলাম।’

গুলি লাগার পর বনশ্রীর এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন রনি। সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের একটি বাসায় নেওয়া হয় তাকে। তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যান এক চিকিৎসক। পরে তাঁকে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দেখেন বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ। সিট নেই, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। পরে বনশ্রীর ভাড়া বাসায় চলে যান তিনি। সেখান থেকে গোপনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৬ জুলাই চিকিৎসক বললেন, ‘এখানে আইসেন না, তুলে নিয়ে যাবে।’

 

এরপরে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরলেও ভয়ে বাড়িতে ছিলেন না রনি। পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে জানতে পারেন পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে ঢাকা থেকে কারা এলাকায় ফিরেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে নিজ বাড়িতে ফেরেন রনি। ১০ আগস্ট থেকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রনি আহমেদ ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাস করেন তিনি। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরিজীবন শুরু করেন। বর্তমানে এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে কর্মরত। নির্বিচার গুলি করা দেখে মনের টানেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। নিজে হাতে ৬/৭ জনের লাশ বের করেছেন তিনি।

 

রনির গুলিবিদ্ধ পায়ে শক্তি নেই। তাঁর মা নিলুফা বেগম বলেন, ‘ওর এখন যে অবস্থা, তাতে দ্রুত কোনো কাজ করতে পারবে না। ওকে যেভাবে গুলি করেছে, তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’ বাবা এলাহি বক্স বলেন, দেশে যেন এমন পরিস্থিতি আর দেখতে না হয়। উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন,বিসয়টি জানার পর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদকে তার বাসায় দেখতে যান যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত

আপডেট টাইম : ০৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

গ্রামের বাড়িতে এসে গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদের বাসায় শনিবার দুপুরে (৩১-০৮-২০২৪) তাকে দেখতে যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। এসময় ওই সময়ের পরিস্থিতির বর্ননা শোনেন এবং চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেন। যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ও এলাকার শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে কৃতি সন্তান হিসেবে পরিচিত। গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক এলাহি বক্স ওরফে আফাং মিয়ার দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকার বনশ্রীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন রনি আহমেদ। বিজিবির ছোড়া গুলি তাঁর বাঁ পায়ের ঊরু ভেদ করে চলে যায় । রনি আহমেদ ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত । এখন রাজশাহীর বাঘায় গ্রমের বাড়িতে বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে তাঁর।

 

এ সময় তার সাথে ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন.বিএনপি নেতা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.ফিরোজ আহমেদ রনজু, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান,আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন,প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া ও রনি আহমেদের স্বজনরা।

ওই সময়ের ঘটনার বর্ননা দিয়ে রনি জানান, গত ১৯ জুলাই দুপুরে তিনি বাসায় ফেরার সময় দেখেন পুলিশ এসে গুলি করতে করতে চলে যাচ্ছে। নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে লোকজনকে বলেন ‘যখন ঘরে ঢুকে মারবে সেই দিন বুঝবেন।’ এরপর এ ব্লক, জি ব্লকসহ আশপাশের লোকজন একত্র করে রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। মাগরিবের আজান হবে–সেই মুহূর্তে ড্রোন এসে দেখে যায় কোন কোন ব্লকে লোকজন আছে। তারা রাস্তা ব্লক করে প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যান। ওপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে গুলি ছুড়ছে। পুলিশ-বিজিবি সোসাইটির মধ্যে ঢুকে অ্যাভিনিউ রোডে গুলি করা শুরু করল। নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য দূরে গেলেন রনি। সামনে ৪-৫ জন ছিল, গুলি লেগে তারা পড়ে গেলেন। তাদের লাশ নেওয়ার জন্য গুলি করতে করতে ধাওয়া করল পুলিশ।
সেই সময়কার পরিস্থিতি সম্পর্কে রনি বলেন, ‘ বিজিবির ছোড়া গুলি আমার বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বের হয়ে গেল। অনেক রক্তপাত হচ্ছিল। ভাবলাম আর বাঁচব না, কলেমা পড়া শুরু করলাম।’

গুলি লাগার পর বনশ্রীর এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন রনি। সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের একটি বাসায় নেওয়া হয় তাকে। তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যান এক চিকিৎসক। পরে তাঁকে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দেখেন বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ। সিট নেই, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। পরে বনশ্রীর ভাড়া বাসায় চলে যান তিনি। সেখান থেকে গোপনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৬ জুলাই চিকিৎসক বললেন, ‘এখানে আইসেন না, তুলে নিয়ে যাবে।’

 

এরপরে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরলেও ভয়ে বাড়িতে ছিলেন না রনি। পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে জানতে পারেন পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে ঢাকা থেকে কারা এলাকায় ফিরেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে নিজ বাড়িতে ফেরেন রনি। ১০ আগস্ট থেকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রনি আহমেদ ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাস করেন তিনি। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরিজীবন শুরু করেন। বর্তমানে এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে কর্মরত। নির্বিচার গুলি করা দেখে মনের টানেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। নিজে হাতে ৬/৭ জনের লাশ বের করেছেন তিনি।

 

রনির গুলিবিদ্ধ পায়ে শক্তি নেই। তাঁর মা নিলুফা বেগম বলেন, ‘ওর এখন যে অবস্থা, তাতে দ্রুত কোনো কাজ করতে পারবে না। ওকে যেভাবে গুলি করেছে, তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’ বাবা এলাহি বক্স বলেন, দেশে যেন এমন পরিস্থিতি আর দেখতে না হয়। উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন,বিসয়টি জানার পর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


প্রিন্ট