কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সুপেয় পানির বিদেশি দান প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ ও সুবিধাভোগীদের কাছে থেকে নিয়ম বহির্ভূত টাকা আদায়ের খবর প্রকাশের পর বের হতে শুরু করেছে আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এবার জানা গেলো, বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে গভীর নলকূপ ও সাবমারসিবল পাম্প বসানোর লাখ-লাখ টাকার সরঞ্জাম নিয়ে টাকা দিচ্ছে না সৌদি আরবের দাতা সংস্থার নামে প্রকল্প পরিচালনাকারী তরুণ শুভ, লাখ টাকা বকেয়া রাখা হয়েছে প্রকল্পে কাজ করা দিন মজুরদের পারিশ্রমিকে।
বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি সুপেয় পানির প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে তোলা হয়েছে লাখ লাখ টাকা, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। তবে, ইতোমধ্যে দেড় হাজারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি টাকার বেশি। দৌলতপুরের শিতলাইপাড়া গ্রামের তরুণ শুভ সৌদি দাতাদের কাছে প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে কয়েক কোটি টাকা তসরুপ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশ ব্যাবসায়ী জানান, তার কাছে থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৮ লাখ টাকার মালামাল বকেয়া নিয়েছে বিদেশি দান প্রকল্পের স্থানীয় ব্যবস্থাপক শুভ। কিন্তু টাকা দেয়ার সময় নিলেও অঙ্গিকার রাখেনি ওই তরুণ।
এক ইউপি সদস্যের নির্বাচনী এলাকায় দরিদ্রদের সুবিধা দেয়ার নামে তার কাছে থেকে শুভ নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা। সীমান্তবর্তী দরিদ্র পীড়িত একটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নিয়েছে তরুণ শুভ। বিনিময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কয়েকটি তারিখ দিলেও সবগুলো তারিখেই ব্যার্থতা দেখিয়েছে প্রকল্প ব্যবস্থাপক। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভুক্তভোগীরাও।
আরেকদিকে জানা গেছে, প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরি পাওয়ার জন্য খুঁজছে কথিত প্রকল্প ব্যবস্থাপক শুভকে।
এমন উদাহরণ অভিযুক্ত শুভ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যত্রতত্র।
উল্লেখ্য, তরুণের দেয়া বর্ননা অনুসারে জমজম নামের সৌদি ভিত্তিক এক দাতা সংস্থার অনুদানে বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার প্রকল্পে অনিয়ম করে সুবিধাভোগীদের কাছে থেকে টাকা তোলা, প্রকল্পের মালামাল চুরি, নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার সহ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি খবর প্রকাশিত হয় দ্যা পিপলস নিউজ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এরপরই মুখ খুলতে শুরু করে প্রতারিত হওয়া মানুষেরা। অভিযুক্ত শুভ গভীর নলকূপের জন্য দুই থেকে চার হাজার ও সাবমারসিবলে দশ থেকে পনের হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে সুবিধা প্রাপ্যদের কাছে থেকে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এসব অভিযোগ স্বীকারও করেছে অভিযুক্ত তরুণ।
এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৌলতপুর থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে, শুক্রবার সকালে বাজুডাঙা এলাকার দিনমজুর আশিক পাওনা টাকা চেয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপকের কাছে গেলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। তরুণ শুভ’র কাছে প্রতারিত হয়ে উদ্বেগে আছেন দৌলতপুরের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
প্রিন্ট