এখানো আপনাদের কাছে (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী) অবৈধ অস্ত্রের পাহাড় রয়েছে। সেই অবৈধ অস্ত্র নিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবেন না। অস্ত্রবাজরা ভালো হয়ে যান। জনগণ যদি আপনাদের কুকীর্তি ক্ষমা করে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আবার যদি সেই অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করতে আসেন, জনগণের সুরক্ষায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আপনাদের প্রতিহত করবে ইনশাল্লাহ।
বুধবার (১৪ আগস্ট) শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা মোড়ে ছাত্র- জনতার গণঅভুত্থানে গুলি চালিয়ে হত্যাকারী সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচাররের দাবিতে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) আলহাজ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। সকাল ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায়। অবস্থান কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীরা জোহর এবং আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার বক্তৃতার শুরুতে ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানসহ বিগত ১৭ বছর আওয়ামী দুঃশাসন এবং যশোরের হোটেল জাবীরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এ সময় ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই এমন স্লোগানে যশোরের রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। এ সময় তিনি আরো বলেন, যে সকল রাষ্ট্রীয় বাহিনী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে জনগণের বুকে গুলি চালিয়েছিল কিংবা তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল।
আজ তাদের চাকুরিচ্যুত করলে হবে না। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা তথা যশোরবাসী কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বের কথা ভুলে যায়নি। যে সকল সন্ত্রাসীরা প্রহসনের ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে তথাকথিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে বসে আছে। আজ এই মুহূর্তে তাদের সকলকে হয় পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তাদের পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। আমরা চাই যশোর তথা সমগ্র দেশ শান্ত থাকুক। আমরা ধৈর্য্য ধারণ ও ক্ষমা করতে জানি। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি বলে, আপনাদের (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের) কুকীর্তির বিচার নিজের হাতে তুলে নিতে চাইনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যায় বিচার পাব, ভুক্তোভোগী পরিবার ন্যায় বিচার পাবে এবং আইনের শাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থরা সান্তনা পাবে।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আরো বলেন , আওয়ামী লীগের মত লুটপাট করার জন্য বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চায় না। দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য ক্ষমতায় যেতে চায়। যে উন্নয়নের ধারা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে চলে যাবার পর। দেশ নায়ক তারেক রহমানকে জনগণের ভোটে রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র বিন্দুতে আসিন করে সেই উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনতে চাই। বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী দুঃশাসনে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। কিন্তু স্বজনহারা কষ্ট বুকে চেপে রেখে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে ছাত্র- জনতার গণঅভুত্থানে গুলি চালিয়ে হত্যাকারী খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
আমরা যশোরের খলিলুর রহমান, মতলেব চেয়ারম্যান, কোহিনুর, আব্দার ফারুক, আশিকুর রহমান আকুল, ফেরদৌস হোসেন, কবির হোসেন পলাশের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা ভুলিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে ট্রাক চাপা দিয়ে আমার দলের সাত সহকর্মীকে হত্যা করেছিল আজও আমরা সেটি ভুলিনি। বিগত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে যশোর জেলা বিএনপির তৎকালীন সহ- সভাপতি শহীদ আবু বকর আবুর সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে যায়নি। আমাদের কষ্ট আছে, বেদনা আছে তারপরও আমরা শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করি। আমরা গর্বিত আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশের এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তির সনদ হাতে নিয়ে হাজার হাজার মাইল দুরে থেকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা তার শুশৃঙ্খল কর্মী বলে এই মুহূর্তে সংযম পালন ও ধৈর্য্য ধারণ করছি।
দেশের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগবার কোন কারণ নেই। সবার আগে আমাদের একটি পরিচয় আমরা মানুষ, আওয়ামী লীগ নই। সেই কারণে আমাদের হাতে দেশ ও জনগণ নিরাপদ থাকে। আমরা অতীতেও জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি, আগামীতেও দিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।
তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শান্ত যশোরে আপনাদের দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেউ যদি অস্থিরতা সৃষ্টি করেন, জনগণের সুরক্ষায় আমরা সেটি রুখে দেব। যতক্ষণ পর্যন্ত না, জনগণের ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের লড়াই অবিচাল থাকবে। আমরা কেউ রাজপথ ছেড়ে যাব না।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম -আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, অ্যাড মো. ইসহক, মিজানুর রহমান খান, মারুফুল ইসলাম, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, অ্যাড হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, কাজী আজম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক উপাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুল ইসলাম কচি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যশোর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ইবাদত খান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব নির্মল কুমার বিট, জেলা শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু জাফর,
জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি, বিএনপি নেতা সুলতান আহমদ, মহিলা দল নেত্রী শামসুন্নাহার পান্না, সেলিনা পারভীন শেলী, আব্দুর রাজ্জাক, যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম, শেখ রবিউল ইসলাম রবি প্রমুখ।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সদস্য গোলাম রেজা দুলু, এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, সিরাজুল ইসলামসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী।
অবস্থান কর্মসূচি পরিচালনা করেন নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাসুম। এদিকে সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে চাঁচড়া বাজার মোড়ে এবং আরবপুর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে পুলেরহাট বাজারে দিন ব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়াও সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
|
প্রিন্ট