রাজশাহীর তানোরে জামায়াত মতাদর্শী এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুমি দস্যুতা ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে।উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) ইলামদহী চকপাড়া গ্রামে এই দখলবাজির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভূমিগ্রাসী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ভাড়াটিয়া বাহিনীর হামলায় প্রতিপক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। গত ৮ জুলাই সোমবার সকালে চকপাড়া গ্রামে মারপিটের এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শিক্ষক রফিকুল বাহিনীর হামলায় আহতরা হলেন তমিজ উদ্দিন, কামরুজ্জামান, আলম, রেজাউল ও মুকবুল হোসেন। তাদের মধ্যে তমিজ উদ্দিন ও কামরুজ্জামানের আঘাত গুরুত্বর হওয়ায় উপজেলা হাসপাতাল থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) বনকেশর মৌজায়, আরএস খতিয়ান নম্বর ১৪২ ও আরএস ১৬৩৭ নম্বর দাগে ৩ একর ৭৬ শতক কৃষি জমি রয়েছে। এই জমির আরএস রেকর্ডীয় মালিক প্রয়াত কেয়ামত সরকার। তার মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা বন্টননামা দলিল করে নিজনিজ নামে খাজনা খারিজ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের বাসিন্দা জামায়াত মতাদর্শী চাঁদপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জাল দলিল সৃষ্টি করে সেই দলিল মুলে আদালতে মামলা করেন। কিন্ত্ত মামলার আদেশ না পেতেই কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে এসব জমিতে চাষ করেন। এদিকে ঘটনা জানতে পেরে গত সোমবার সকালে জমির প্রকৃত মালিক তমিজ উদ্দিন, কামরুজ্জামান ও আলমসহ ওয়ারিশগণ বৈধ কাগজ পত্র নিয়ে শিক্ষক রফিকুলের কাছে জানতে চায় তারা কেনো জমিতে চাষ দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় রফিকুলের নির্দেশে তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তাদের ওপর বর্বোরচিত হামলা করে।
জমির ওয়ারিশ মুনজুর রহমান জানান, জমির রেকর্ডীয় মালিক তার দাদা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশ সুত্রে তিনি মালিক হয়েছেন। মুঞ্জুর বলেন, তিনিসহ সকল ওয়ারিশগণ তাদের নিজ নিজ নামে খাজনা খারিজ চলমান রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক রফিকুল ১৯২০/২২ সালে জমি কিনেছে বলে দাবি করেন, তারা তাদের বলেছেন তাদের কাগজপত্র সঠিক থাকলে তারা জমি ছেড়ে দিবেন, রফিকুল কোন কাগজ পত্র দেখাবেন না।
উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলম ও রফিক জানান, কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে জমিগুলো চাষ করেছে রফিক বাহিনীর লোকজন। আমরা সোমবার সকল কাগজপত্রসহ জমিতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি কিসের বিনিময়ে চাষ করা হয়েছে বলা মাত্রই রফিকের নির্দেশে তার বাহিনী তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। রফিকুল বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আনারুল তার পুত্র সোহাগ, জাকারিয়া, শিক্ষক রফিকুলের চাচাতো ভাই সহিদুল, তার পুত্র সোহেল, সুজনসহ তাদের লোকজন লোহার রড, চাপাতি, রামদা, বাশের লাঠি দিয়ে বেপরোয়া মারপিট করেছে। তারা তিনজন উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তমিজউদদীন ও কামরুজ্জামানের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ার কারনে তাদের রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেছে।
এদিকে গত ৮ জুলাই সোমবার সরেজমিন চকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে তেমন মানুষজন নাই। যারা আছে তারা রফিকুল বাহিনীর আতঙ্কে রয়েছে। গ্রামের পশ্চিম দিকে জমির অবস্থান। গ্রামবাসী জানান, জমির প্রকৃত মালিক মৃত কেয়ামত সরকারের ওয়ারিশগণ। তাদের নামে খাজনা খারিজ সব কিছুই রয়েছে। বিগত ২০০১ সালের আগে মৃত কেয়ামত সরকারের ওয়ারিশগণ ভোগ দখল করতেন। কিন্তু ২০০১ সালে বোমা ফাটিয়ে জমিটি দখল করে শিক্ষক রফিকুল বাহিনী। কিন্তু তার নামে কোন কাগজপত্র নাই। শুধু লাঠির জোরে জমি দখলে রেখেছে। যে দুজনকে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে তাদের নাক কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। সবার মাথা ফেটেছে, শরীরেও এলোপাতাড়ি ভাবে পিটিয়েছে রফিকের লোকজনরা। একজন মাদরাসা শিক্ষক হয়ে দখলবাজি করছেন। তাহলে আর কি বলার আছে।
শিক্ষক রফিকুল ইসলামের মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি জানান আমি কোর্টে আছি, আমার পক্ষের ৬ জন লোক আহত হয়েছে। তিনি বলেন, তার কাগজপত্র আছে কি না, তা তিনি জায়গা মতো দেখাবেন। তিনি বলেন, জায়গা-জমির বিষয়ে পুলিশ কে পুলিশ আদালত ?
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, মারপিটের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো অভিযোগ পায়নি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট