রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্পের খাল খননের কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্থানীয় ঠিকাদারেরা। তাদের একজন এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সুমন্ত কুমার বসাকের শার্টের কলারও চেপে ধরেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে এখন ওই ঠিকাদারদের সঙ্গেই আপস করছে বিএমডিএ। এমনকি যে কাজগুলো না পেয়ে রাজশাহীর ঠিকাদাররা পিডির ওপর চটেছিলেন সেই কাজের দরপত্র বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন আবার নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। সেখানে সব ঠিকাদারদের অন্তত একটি করে কাজ দেওয়ার মৌখিক আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল ও নতুন করে দরপত্র আহবানের খবর ছড়িয়ে পড়লে। কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। এসব ঠিকাদারগণ এবিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ঘুষ দেয়া নেয়া দুটোই সমান অপরাধ। তিনি বলেন, ঘুষ দিয়ে কাজ না পেয়ে কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার পরেও শাস্তি না পেয়ে উল্টো কার্যাদেশ বাতিলসহ তাদের সঙ্গেই আপোষ করতে হলো এটা পুরো বিএমডিএ’র লজ্জা।
জানা গেছে, বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাক ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক। সম্প্রতি তিনি খাল খননের ২৫টি কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রতিটি কাজ ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার। এই কাজগুলো পান নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর ঠিকাদাররা। রাজশাহীর কেউ কাজ পাননি।
এ কারণে রাজশাহীর ঠিকাদারদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে সুমন্ত কুমার বসাক অফিসেই যাচ্ছিলেন না। অবশেষে গত ২৮ এপ্রিল তিনি অফিসে যান। এ সময় ঠিকাদাররাও বরেন্দ্র ভবনে যান। তখন সুমন্ত কুমার বসাক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হাদার কক্ষে ঠিকাদারদের নিয়ে বসেন। সেখানে রাজশাহী মহানগর কৃষক লীগের এক নেতা ও বিএমডিএর ঠিকাদার প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাককে রীতিমতো ধমকাতে শুরু করেন। তাদের
তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে পাশে বসে থাকা ঠিকাদার জনৈক রাসেল প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার বসাকের শার্টের কলার চেপে ধরেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এঘটনার পর থেকে সুমন্ত কুমার বসাক সাংবাদিকদের ফোন ধরছেন না। সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না অফিসে গেলেও। তবে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ঘটনার পর নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছিলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এক সপ্তাহ পরও কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, যে মাইর খেয়েছে, সে যদি অভিযোগ করতে না চায় তাহলে আর কী করার আছে। সে তো কোনো অভিযোগ করতে চায় না। দরপত্র বাতিল করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। সে জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে টেন্ডার হবে। তিনি বলেন, টেন্ডার বাতিলের মাধ্যমে কারও সঙ্গে আপস করা হচ্ছে না।
- আরও পড়ুনঃ কালুখালীতে স্বাস্থ্য সেবার মান পরিবর্তন!
এদিকে স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, প্রকল্পের পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ‘পার্সেন্টেজ’ নেন বলেও অভিযোগ আছে। শার্টের কলার চেপে ধরার পর রাজশাহীর ঠিকাদাররা দাবি করেছিলেন, এই কাজগুলো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পিডি সুমন্ত কুমার বসাক তাদের কাছ থেকে নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু আরও বেশি সুবিধা পেয়ে তিনি নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর ঠিকাদারদের কাজ দিয়েছেন। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে সুমন্ত কুমার বসাককে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রিন্ট