কুষ্টিয়ায় উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আরও প্রকট হচ্ছে আ.লীগের ভেতরের গৃহদাহ। দলীয় প্রতীক না থাকায় এমপি ও জেলা-উপজেলার নেতাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী না দিলেও দলের স্থানীয় এমপি ও নেতারা নিজের ভাইদের প্রার্থী করছেন।
জেলার খোকসা ও কুষ্টিয়া সদর দুই উপজেলায় স্থানীয় এমপির ভাই ও এক উপজেলায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যন ও জেলা আ.লীগ সভাপতির ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলে।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন স্থানীয় এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের ছোট ভাই রহিম উদ্দিন খান এবং কুমারখালী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন পৌরমেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুণের ভাতিজা ও সাবেক এমপি সুলতানা তরুণের ছেলে গোলাম মোর্শেদ পিটার।
সুত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে খোকসা উপজেলায় আ.লীগের রাজনীতি। দলীয় বিরোধের প্রভাব পড়েছে এ উপজেলায়। তিন মেরুতে বিভক্ত এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বর্তমান-সাবেক এমপি এবং জেলা আ.লীগের সভাপতির গ্রুপিংয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
যার প্রভাব পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে। দলের প্রভাবশালী তিন নেতা প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে সহিংসতার সম্ভবনা রয়েছে এ উপজেলায়। আগামী ৮মে প্রথম ধাপেই এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান এমপি আব্দুর রউফের সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-মাছুম মোর্শেদ শান্ত। সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন তারই আপন ভাই উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম উদ্দিন খান।
খোকসা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার বলেন, সদর উদ্দিন খান দলের সভাপতি হয়েও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। এখন নিজের ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবু তৈয়বুর রহমান বাদশা। ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। দিনরাত করেছেন গণসংযোগ।
কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে আর চেয়ারম্যান প্রার্থী হননি আবু তৈয়ব বাদশা। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী না হয়ে আবারো ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বাদশা বলেন, আমার কিছুই করার নেই। দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে।
এ উপজেলায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার ও এবি পার্টির আবু আহাদ আল মামুন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। আর এবি পার্টির আবু আহাদ আল মামুনেরও মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। সেক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতা নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভবনা রয়েছে মাহবুবউল আলম হানিফের চাচতো ভাই আতাউর রহমান আতার।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান এমপি ও উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর আপন ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী। এ উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক এজাজ আহমেদ মামুন। এমপির একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ভাইকে প্রার্থী করায় একজোট হয়েছেন উপজেলা আ.লীগের নেতারা।
সাবেক এমপি ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সরোয়ার জাহান বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমনসহ উপজেলার নেতারা বৈঠক করে প্রার্থী ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। তাদের প্রার্থী হিসেবে জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকার হাসুর নাম শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী ও হাসানুল আসকার হাসু প্রার্থী হলে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের মধ্যে আরো চাঙ্গা হবে গ্রুপিং। যার প্রাভাব পড়বে স্থানীয় রাজনীতিতে।
হাসানুল আসকার হাসু বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার উপজেলা আ.লীগের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমাকে প্রার্থী করলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় নির্বাচনের চেষ্টা করবে। মিডিয়াসহ সকলে সহযোগিতা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব হবে বলে জানান এই নেতা।
কুমারখালী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন পৌরমেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুণের ভাতিজা ও সাবেক সাবেক এমপি সুলতানা তরুণের ছেলে গোলাম মোর্শেদ পিটার। তিনি সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জেও ভাতিজা। সেলিম আলতাফ জর্জ নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এখানকার বর্তমান এমপি আব্দুর রউফ। তার সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান। এ উপজেলায় বর্তমান ও সাবেক এমপির মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় জ্বলছে এ উপজেলা। নির্বাচন পরবর্তী তিনমাসে দুই পক্ষের খুন হয়েছে দুজন। আহত হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।
উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় কোন্দল এবং বিভক্তি বিদ্যমান থাকায় সহিংসতা আরো বাড়বে বলে আশংকা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে যেকোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, কুষ্টিয়ার একাধিক উপজেলায় এমপি ও নেতাদের ভাই বা আত্মীয়-স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলের থেকে কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে ভাইকে প্রার্থী করে কোন প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রিন্ট