সন্ত্রাসীদের কালো থাবা পড়েছে দৌলতপুর আল্লারদর্গা নাসির টোব্যাকো ইন্ডাষ্ট্রিজের উপর। ৩১ মার্চ রবিবার থেকে মিলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনিদিষ্টকালের জন্য মিল বন্ধ করে দেয়। এরই প্রতিবাদে কর্মহীন শ্রমিকরা মিলটি খোলার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মিল গেটের সামনে।
বন্ধ মিল চালুর দাবি করে, ৩১ মার্চ রবিবার ১২টার সময় আল্লারর্দগা নাসির টোব্যাকো লীফ ইন্ডাষ্ট্রি মিল গেটের সামনে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে।
গত চার মাস ধরে মিল বন্ধ থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাপাত কাটছে শ্রমিকরা। অবিলম্বে মিল মালিক মিল চালু করে উপার্জনের মাধ্যম ফিরিয়ে দেয়ার দাবি শ্রমিকদের।
আল্লারদর্গার নাসির টোব্যাকো লীফ ইন্ডাষ্ট্রি বন্ধ থাকায়, ইন্ডাষ্ট্রিজ এখন সুনসান নীরবতা। মিলের চাকা থামার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার শ্রমিকের উপার্জনের মাধ্যম। এতে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। শ্রমিকদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে আল্লারদর্গা শিল্পাঞ্চলের আকাশ বাতাস।
নাসির টোব্যাকো ইন্ডাষ্ট্রিজের সহকারী ম্যানেজার আসাদুল হক বাবু ও সিনিয়র অফিসার মাহাবুব ই খোদা ছবি ও ব্যাংকিং ক্যাশিয়ার নাজিমুদ্দিন জানান, নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেশবরেণ্য শিল্পপতি প্রয়াত নাসির উদ্দিন বিশ্বাস বছর দেড়েক আগে মারা যান। তার মৃত্যুর পর প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বিশ্বাস ও দ্বিতীয় স্ত্রী তাসলিমা সুলতানার মধ্যে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ভাগাভাগি নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব।
এ নিয়ে দুই স্ত্রী উচ্চ আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ে। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে নাসির বিড়ি এবং নাসির লীভ টোব্যাকো বিশ্বাস প্রিন্টিং এর একাধিক ব্র্যান্ডের প্যাকেজ ব্যান্ড উৎপাদন বন্ধ করে দেন ১ম পক্ষ স্ত্রী আনোয়ার বেগমের সন্ত্রাসী বাহিনীরা। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট থেকে দ্বিতীয় পক্ষ স্ত্রী তাসলিমা সুলতানার নাসির বিড়ি এবং নাসির লীভ টোব্যাকোর পক্ষে রায় পায়। চরম ক্ষব্ধ হয়ে ১ম পক্ষ স্ত্রী আনোয়ারা বিশ্বাস নাসির বিড়ির মধ্যে এ্যাডভান্স ভূঁয়া নাসির বিড়ি নামের আলাদা প্রতিষ্ঠানের দাবী করে ১ম পক্ষের স্ত্রীর পৌষ্য সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মিলের মধ্যে কাটা তারের বেড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নানা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলোশ্রুতিতে নাসির লীভ টোব্যাকোর ফ্যাক্টরী বন্ধ হওয়ায় কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে।
হতাশা প্রকাশ করে মহিলা শ্রমিক নাজমা খাতুন ও রেহেনা বানু বলেন, মিল অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো। ঈদ আসছে, মিল চালু না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে। আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবো, ছেলে-মেয়েদের মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেব। এখন মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই।
হঠাৎ করে মিলটির উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছি শ্রমিক ভাই-বোনেরা। স্বাপ্ন দেখে ছিলাম ছেলে-মেয়েদেরকে সাথে করে ভালো কিচ্ছু ঈদের দিন খাবো, তা এখন দুর স্বাপ্ন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক নেতা শুভোন, আঃ রাজ্জাক, জুয়েল, জিয়ারুল ও মানিক জানান, মালিক পক্ষের মোতবিরোধ থাকতে পারে। সেটা অন্য কথা । প্রায় ৪ মাস আগে বন্ধ হওয়া শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও মজুরী পরিশোধ করে আজ থেকে মালিক পক্ষ মিল অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিলেন আমরা শতশত শ্রমিক বেকার হয়ে গেলাম। অবিলম্বে মিল চালু করে আমাদের কর্ম ফিরে দেওয়ার জন্য মালিক পক্ষের কাছে জোরদাবী জানাচ্ছি।
তা না হলে, আধীকার ফিরিয়ে পাওয়ার জণ্য বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকবে।
দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, নাসির টোব্যাকো ইন্ড্রাস্ট্রিজের ডিজিএম খাজিমুল বাসার অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্যাক্টরি বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা। ঈদ সামনে রেখে ফ্যাক্টরি বন্ধের হঠকারি সিদ্ধান্তের ঘোষণায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। নাসির টোব্যাকো ইন্ডাষ্ট্রিজের শত শত শ্রমিক-কর্মচারী ফ্যাক্টরী খোলার দাবিতে শান্তি শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারে নাসির টোব্যাকো ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিকপক্ষের বক্তব্য নেয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
প্রিন্ট