ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বোয়ালমারীতে দেউলিয়া মিলটির পাশেই নতুন জুটমিল প্রতিষ্ঠিত করেছেন পরিচালনাকারীরা Logo মাগুরায় শত্রুজিৎপুর নূরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসায় জালিয়াতি করে চাকরির অভিযোগ Logo মুকসুদপুরে সাংবাদিক হায়দারের কুশপুত্তলিকা দাহ Logo মুকসুদপুরে যুবদলের উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ Logo তানোরে সার চোরাচালানের মহোৎসব! Logo ফরিদপুরে ৫ দিনব্যাপী ৮৬১ ও ৮৬২ তম কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্স উদ্বোধন Logo রূপগঞ্জে ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার Logo বালিয়াকান্দির ‘উকুন খোটা’ স্কুল এখন দেশসেরা হওয়ার অপেক্ষায় Logo তানোরের নারায়নপুর স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান Logo বাঘায় গলা কেটে হত্যা, নিহতের ভাইরা ভাই রায়হান গ্রেপ্তার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ভেনামি চিংড়ির কাছে মার খাচ্ছে বাগদা-গলদা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • ১০৬ বার পঠিত

দেশের রপ্তানির সিংহভাগ চিংড়ির জোগান দেয় দক্ষিণ অঞ্চলের পাঁচ জেলা। সম্প্রতি অঞ্চলটিতে চিংড়ির উৎপাদন বাড়লেও কমেছে রপ্তানি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম সাদা সোনাখ্যাত এই খাতটি পড়েছে চরম মন্দাদশায়। তবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্থানীয় মার্কেটে চিংড়ির চাহিদা অনেক বেশি। এ ছাড়া বিদেশে ভেনামি চিংড়ির কাছে মার খাচ্ছে বাগদা-গলদা। এসব কারণেই মূলত কমেছে রপ্তানি।

 

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অফিস জানায়, খুলনা বিভাগে বেশিরভাগ চিংড়ি চাষাবাদ হয় ৫টি জেলায়। জেলাগুলো হলো খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই জেলাগুলোতে ১ লাখ ৪০ হাজার ১১ টন চিংড়ি উৎপাদন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১ লাখ ২ হাজার ২১৫ টন।

 

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চল থেকে ইউএসএ, থাইল্যান্ড, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডন, ইন্ডিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ৩৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চিংড়ি রপ্তানি করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ অঞ্চল থেকে ২৪ হাজার ১০৪ টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১৯ হাজার ৯০৪ টন।

 

পরিসংখ্যান বলছে, একটি অর্থবছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে চিংড়ি উৎপাদন বেড়েছে ৩৭ হাজার ৭৯৬ টন। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে ৪ হাজার ২০০ টন।

 

 

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার লিপটন সরদার বলেন, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার ইউরোপ। সেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবেও কমেছে। তিনি জানান, দেশের বাজারেও চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। বিদেশ থেকে এখন দেশেই চিংড়ির দাম বেশি। ভোক্তারা দাম দিয়েই কিনে খাচ্ছেন। দেশে অভিজাত শপিং মলে চিংড়ি থেকে উৎপাদিত খাবারের চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণেও কমছে চিংড়ি রপ্তানি।

 

খুলনা এটলাস সি ফুড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ কুমার দে বলেন, বাংলাদেশে বাগদা, গলদা ও হরিনা চিংড়ি রপ্তানি হয়। যার উৎপাদন ও রপ্তানি খরচও অনেক বেশি। কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা এসব চিংড়ির ভালো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন খরচ অনেক কম। অন্য দেশ ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন করে স্বল্পমূল্যে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করছে। দাম কম পেয়ে বিদেশিরা ভেনামি চিংড়িতেই ঝুঁকছেন। এ ছাড়া দেশে ডমেস্টিক মার্কেটে চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। ডমেস্টিক মার্কেট থেকে মানুষ বেশি দাম দিয়ে চিংড়ি খাচ্ছে। দেশের বাজারের তুলনায় বিদেশে মূল্য কম। সে কারণেও কমেছে চিংড়ি রপ্তানি।

 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর বলেন, বাগদা-গলদা চিংড়ির তুলনায় বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির দাম অনেক কম। সে কারণে বিদেশিদের কাছে ভেনামি চিংড়ি চাহিদা বেড়েছে। একশ ভাগের মধ্যে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা রয়েছে ৭৮ শতাংশ। সেখানে বাগদা চিংড়ির বাজার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। গলদা চিংড়ির বাজার মাত্র ৬ শতাংশ। অন্যান্য চিংড়ির চাহিদা ৫ শতাংশ। ফলে বিশ^বাজার ধরতে গেলে ভেনামি চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই।

 

তিনি আরও বলেন, সরকার ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু চাষিরাও নতুন প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনে ভীতির মধ্যে রয়েছে। কারণ এখন পোনা, খাবার ও বিদ্যুৎসহ উৎপাদন খরচ বেশি। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে ভেনামি চিংড়ি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

 

 

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, পোনা সংকটে ভেনামি চাষ বাড়ছে না। জেলায় ১৫ জন মৎস্যচাষিকে ভেনামি চিংড়ি চাষে অনুমতি দেওয়া হয়। অথচ চাষ করেছেন মাত্র ৩ জন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে পোনা আমদানি করতে হয়। তবে দেশে পোনা উৎপাদনে বটিয়াঘাটা উপজেলায় দেশ বাংলা হ্যাচারিকে সম্প্রতি অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা পোনা উৎপাদন অবকাঠামো তৈরি করছে। পোনা পেলে চাষিরা চাষে আগ্রহী হবেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালমারীতে দেউলিয়া মিলটির পাশেই নতুন জুটমিল প্রতিষ্ঠিত করেছেন পরিচালনাকারীরা

error: Content is protected !!

ভেনামি চিংড়ির কাছে মার খাচ্ছে বাগদা-গলদা

আপডেট টাইম : ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
ডেস্ক রিপোর্ট :

দেশের রপ্তানির সিংহভাগ চিংড়ির জোগান দেয় দক্ষিণ অঞ্চলের পাঁচ জেলা। সম্প্রতি অঞ্চলটিতে চিংড়ির উৎপাদন বাড়লেও কমেছে রপ্তানি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম সাদা সোনাখ্যাত এই খাতটি পড়েছে চরম মন্দাদশায়। তবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্থানীয় মার্কেটে চিংড়ির চাহিদা অনেক বেশি। এ ছাড়া বিদেশে ভেনামি চিংড়ির কাছে মার খাচ্ছে বাগদা-গলদা। এসব কারণেই মূলত কমেছে রপ্তানি।

 

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অফিস জানায়, খুলনা বিভাগে বেশিরভাগ চিংড়ি চাষাবাদ হয় ৫টি জেলায়। জেলাগুলো হলো খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই জেলাগুলোতে ১ লাখ ৪০ হাজার ১১ টন চিংড়ি উৎপাদন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১ লাখ ২ হাজার ২১৫ টন।

 

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চল থেকে ইউএসএ, থাইল্যান্ড, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডন, ইন্ডিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ৩৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চিংড়ি রপ্তানি করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ অঞ্চল থেকে ২৪ হাজার ১০৪ টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১৯ হাজার ৯০৪ টন।

 

পরিসংখ্যান বলছে, একটি অর্থবছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে চিংড়ি উৎপাদন বেড়েছে ৩৭ হাজার ৭৯৬ টন। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে ৪ হাজার ২০০ টন।

 

 

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার লিপটন সরদার বলেন, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার ইউরোপ। সেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবেও কমেছে। তিনি জানান, দেশের বাজারেও চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। বিদেশ থেকে এখন দেশেই চিংড়ির দাম বেশি। ভোক্তারা দাম দিয়েই কিনে খাচ্ছেন। দেশে অভিজাত শপিং মলে চিংড়ি থেকে উৎপাদিত খাবারের চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণেও কমছে চিংড়ি রপ্তানি।

 

খুলনা এটলাস সি ফুড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ কুমার দে বলেন, বাংলাদেশে বাগদা, গলদা ও হরিনা চিংড়ি রপ্তানি হয়। যার উৎপাদন ও রপ্তানি খরচও অনেক বেশি। কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা এসব চিংড়ির ভালো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন খরচ অনেক কম। অন্য দেশ ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন করে স্বল্পমূল্যে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করছে। দাম কম পেয়ে বিদেশিরা ভেনামি চিংড়িতেই ঝুঁকছেন। এ ছাড়া দেশে ডমেস্টিক মার্কেটে চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। ডমেস্টিক মার্কেট থেকে মানুষ বেশি দাম দিয়ে চিংড়ি খাচ্ছে। দেশের বাজারের তুলনায় বিদেশে মূল্য কম। সে কারণেও কমেছে চিংড়ি রপ্তানি।

 

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর বলেন, বাগদা-গলদা চিংড়ির তুলনায় বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির দাম অনেক কম। সে কারণে বিদেশিদের কাছে ভেনামি চিংড়ি চাহিদা বেড়েছে। একশ ভাগের মধ্যে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা রয়েছে ৭৮ শতাংশ। সেখানে বাগদা চিংড়ির বাজার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। গলদা চিংড়ির বাজার মাত্র ৬ শতাংশ। অন্যান্য চিংড়ির চাহিদা ৫ শতাংশ। ফলে বিশ^বাজার ধরতে গেলে ভেনামি চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই।

 

তিনি আরও বলেন, সরকার ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু চাষিরাও নতুন প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনে ভীতির মধ্যে রয়েছে। কারণ এখন পোনা, খাবার ও বিদ্যুৎসহ উৎপাদন খরচ বেশি। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে ভেনামি চিংড়ি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

 

 

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, পোনা সংকটে ভেনামি চাষ বাড়ছে না। জেলায় ১৫ জন মৎস্যচাষিকে ভেনামি চিংড়ি চাষে অনুমতি দেওয়া হয়। অথচ চাষ করেছেন মাত্র ৩ জন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে পোনা আমদানি করতে হয়। তবে দেশে পোনা উৎপাদনে বটিয়াঘাটা উপজেলায় দেশ বাংলা হ্যাচারিকে সম্প্রতি অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা পোনা উৎপাদন অবকাঠামো তৈরি করছে। পোনা পেলে চাষিরা চাষে আগ্রহী হবেন।


প্রিন্ট