আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে আলু চাষ করে আলু চাষিরা চরম লোকসানের মুখে পড়ে দেউলিয়া হবার পথে। এবছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ (স্টোর জাত পর্যন্ত) ২৫ টাকা। কিন্ত্ত কোল্ড স্টোরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। এতে স্টোর ভাড়া বাদে কৃষক পাচ্ছেন প্রতি কেজিতে মাত্র ৬ টাকা,প্রতি কেজিতে লোকসান ১৯ টাকা।
–
এদিকে কোল্ড স্টোরে ৭০ কেজির এক বস্তা আলু ঢেলে বাছাই করে কৃষক আলু পাচ্ছে ৬০ কেজি, তবে স্টোর ৭০ কেজিরই ভাড়া নিচ্ছেন। স্টোর কর্তৃপক্ষ শ্রমিক খরচসহ প্রতি কেজি আলুর ভাড়া নিচ্ছেন ৬ টাকা।এছাড়াও সেড ভাড়া রয়েছে। এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা এবং ফলন হয়েছে গড় ৫৫ বস্তা (এক বস্তায় ৭০ কেজি)। এবছর আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না। এতে আলু চাষিদের মাথায় হাত। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকেরা আলু চাষ করে অনেকট দেউলিয়া হবার পথে।
–
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জমি ইজারা, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতিক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে
খরচ বেড়েছে। তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) কালনা গ্রামের মৌসুমি আলু চাষি ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুর রহমান মাহাম বলেন, এবছর তিনি সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করে দেউলিয়া হবার পথে। তিনি বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।তিনি বলেন, গত বছর তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ হয়েছিল। এবারো লাভের আশায় সবকিছু বাড়তি দামে কিনে সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্ত্ত ১৫ টাকা কেজি দরে একশ’ বস্তা আলু বিক্রি করে তিনি মাত্র ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
–
তবে নিজের জমি বলে লোকসান কিছুটা কম হয়েছে।
–
উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জমসেদপুর মাঠে ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে চাষি ওলিকে। তিনি জানান সবকিছুর বাড়তি দামের কারনে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে। বিঘায় ফলন হয়েছিল ৩৪ বস্তা করে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হয়েছে ১৪ টাকা কেজি দরে। ৪ বিঘায় লোকসান প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
–
একই মাঠে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আসায় দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষক আনোয়ারকে। ফটিক নামের অপর কৃষক ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছে ৪০ বস্তা করে।এতে তার বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হয়েছে। অন্যদিকে সাফিউল দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, সাত বছর পর লাভের আশায় আলু চাষ করে খরচের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেননি।
–
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, এবারে আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন।
প্রিন্ট