ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ইরানের খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহর ‘গোপন’ চিঠি Logo আ.লীগ একটি বাজে দল, প্রত্যেক লিডারশিপের হাতে রক্তঃ -প্রেস সচিব শফিকুল আলম Logo দৌলতপুর সীমান্তে মাদকসহ ৩ ভারতীয় আটক Logo লালপুরে মারধর ও প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী, আহত ১ Logo বাঘায় পুকুরে গোসল করতে নেমে বয়স্ক নারীর মৃত্যু Logo সদরপুর থানায় নবাগত ওসি নাজমুল হাসানের যোগদান Logo রূপগঞ্জে বালুনদীর উপর চনপাড়া সেতু যেন মরনফাঁদ! Logo ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo কাঁফনের কাপড় মাথায় বেঁধে ফরিদপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের গণমিছিল Logo সরকারি খাল দখল করে তিনতলা ভবন নির্মাণ, বোয়ালমারীতে কৃষকদের মানববন্ধন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

খেজুর গুড়ের এলাকা ফরিদপুর এখন ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব

ফরিদপুর জেলা এক সময় খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিলো। তবে কালের পরিক্রমায় সেদিন আর নেই। এ জেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকায় এখন খাঁটি খেজুর গুড় পাওয়া দুরূহ। পথে-ঘাটে কিংবা গুড়ের দোকানগুলো থেকে ক্রেতারা যে খেজুর গুড় কিনছেন, তা আদতে খাঁটি খেজুর গুড় নয়।

 

ফরিদপুর জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারও ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব। চিনি, ঝোলা গুড়, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে এসব খেজুর গুড় তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

 

পৌরসভার গুড় বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর গুড় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা ও ঝোলাগুড় ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুড়ের দোকানসহ মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারীরা এসব গুড় বিক্রি করছেন।

 

 

অভিযোগ উঠেছে, গুড় প্রস্তুতকারকরা বাড়তি লাভের আশায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় ঝোলা খেজুর গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। তারা বাজার থেকে কমদামে নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাছির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ৮-১০ লিটার খেজুর রসে এক কেজি গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে জ্বালানি ও মজুরিসহ খরচ হয় ৫০০ টাকার মতো। আর এজন্য প্রতি কেজি খেজুর গুড় কোন অবস্থাতেই খুচরা পর্যায়ে ৭০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। পক্ষান্তরে ১০ লিটার রসের সাথে দুই কেজি চিনি মেশালে গুড় বেড়ে হয় তিন গুণ। কিন্তু এই টাকায় গুড় কেনার ক্রেতা খুব বেশি নেই। তাই চিনি এবং ঝোলা গুড় মিশিয়ে গুড়ের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হচ্ছে।

 

গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতেও চিনি মেশাতে বাধ্য হন বলে জানান তারা। চিনি মেশানো এই গুড়ে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ থাকে না। চিনিমুক্ত গুড়ের রং হয় কালো। তাতে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে।
বোয়ালমারী বাজারের প্রসিদ্ধ গুড় ব্যবসায়ী মানিক রায় জানান, খাঁটি খেজুর গুড় বলে আমরা যা পাইকারি কিনছি তা ক্রেতাদের কাছে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর সাধারণ মানেরটা ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

 

নাজমুল হক নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, এক হাজার টাকায় দুই কেজি খেজুর গুড় কিনেছি। কিন্তু তা মানসম্মত নয়। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী লিটু সিকদার জানান, ফরিদপুর জেলা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। অথচ ফরিদপুরেই আজ খেজুর গুড়ের সংকট। প্রকৃত খেজুর গুড় চেনার উপায় নেই। গুড়ে ফ্লেভার ব্যবহার করা হচ্ছে। গুড় উৎপাদনকারীরা ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতে তারা চিনির সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, আগামী বছর যদি আমি বোয়ালমারীতে থাকি তবে গাছিদের নিয়ে এক-দুই দিনের ওয়ার্কশপের আয়োজন করব, যাতে গাছিরা গুড় তৈরিতে কোন ভেজাল ব্যবহার না করে। ফরিদপুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে ধরে রাখা যায়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরানের খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহর ‘গোপন’ চিঠি

error: Content is protected !!

খেজুর গুড়ের এলাকা ফরিদপুর এখন ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব

আপডেট টাইম : ০২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
দীপঙ্কর অপু, বিশেষ প্রতিনিধি :

ফরিদপুর জেলা এক সময় খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিলো। তবে কালের পরিক্রমায় সেদিন আর নেই। এ জেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকায় এখন খাঁটি খেজুর গুড় পাওয়া দুরূহ। পথে-ঘাটে কিংবা গুড়ের দোকানগুলো থেকে ক্রেতারা যে খেজুর গুড় কিনছেন, তা আদতে খাঁটি খেজুর গুড় নয়।

 

ফরিদপুর জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারও ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব। চিনি, ঝোলা গুড়, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে এসব খেজুর গুড় তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

 

পৌরসভার গুড় বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর গুড় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা ও ঝোলাগুড় ১০০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুড়ের দোকানসহ মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারীরা এসব গুড় বিক্রি করছেন।

 

 

অভিযোগ উঠেছে, গুড় প্রস্তুতকারকরা বাড়তি লাভের আশায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় ঝোলা খেজুর গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। তারা বাজার থেকে কমদামে নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাছির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ৮-১০ লিটার খেজুর রসে এক কেজি গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে জ্বালানি ও মজুরিসহ খরচ হয় ৫০০ টাকার মতো। আর এজন্য প্রতি কেজি খেজুর গুড় কোন অবস্থাতেই খুচরা পর্যায়ে ৭০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। পক্ষান্তরে ১০ লিটার রসের সাথে দুই কেজি চিনি মেশালে গুড় বেড়ে হয় তিন গুণ। কিন্তু এই টাকায় গুড় কেনার ক্রেতা খুব বেশি নেই। তাই চিনি এবং ঝোলা গুড় মিশিয়ে গুড়ের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হচ্ছে।

 

গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতেও চিনি মেশাতে বাধ্য হন বলে জানান তারা। চিনি মেশানো এই গুড়ে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ থাকে না। চিনিমুক্ত গুড়ের রং হয় কালো। তাতে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে।
বোয়ালমারী বাজারের প্রসিদ্ধ গুড় ব্যবসায়ী মানিক রায় জানান, খাঁটি খেজুর গুড় বলে আমরা যা পাইকারি কিনছি তা ক্রেতাদের কাছে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর সাধারণ মানেরটা ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

 

নাজমুল হক নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, এক হাজার টাকায় দুই কেজি খেজুর গুড় কিনেছি। কিন্তু তা মানসম্মত নয়। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী লিটু সিকদার জানান, ফরিদপুর জেলা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। অথচ ফরিদপুরেই আজ খেজুর গুড়ের সংকট। প্রকৃত খেজুর গুড় চেনার উপায় নেই। গুড়ে ফ্লেভার ব্যবহার করা হচ্ছে। গুড় উৎপাদনকারীরা ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতে তারা চিনির সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, আগামী বছর যদি আমি বোয়ালমারীতে থাকি তবে গাছিদের নিয়ে এক-দুই দিনের ওয়ার্কশপের আয়োজন করব, যাতে গাছিরা গুড় তৈরিতে কোন ভেজাল ব্যবহার না করে। ফরিদপুরের গুড়ের ঐতিহ্য যাতে ধরে রাখা যায়।


প্রিন্ট