প্রতিদিন সকাল থেকে বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শিখতে আসলে আজ তা ভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের কাঁধে কোনো স্কুল ব্যাগ নেই, নেই কোনো বই, খাতা ও কলম। সকলেই নানান সাজে নিজ অভিভাবকসহ বিদ্যালয়ে এসেছে পিঠা উৎসব করতে।
আজ পহেলা ফাল্গুন। ভালোবাসা দিবসও। ঋতুচক্রের নিয়মে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। পিঠাপুলির গন্ধ, জীবন জুড়ে বয়ে চলুক স্বপ্ন সুখের ছন্দ’। এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ভেড়ামারা আল্ হেরা মডেল একাডেমি বিদ্যালয়ের মাঠে নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, ইলিশ পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠাসহ আরও কত নাম! সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিকসহ নানা অনুষ্ঠান।
বসন্ত বাতাসে মনে জাগে ভালোবাসাও। একই দিনে পালিত হচ্ছে বসন্তবরণ ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতি পিঠা উৎসব। ভেড়ামারা শহরের আল্ হেরা একাডেমীর স্কুলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উৎসবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীদের নিয়ে দিনব্যাপী এক মিলন মেলায় পরিনত হয়।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার বাহারি পিঠা। একসময় পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় ছোট- বড় সকলেই পিঠা খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠত। কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়েনা।
১৪ ফেব্রুয়ারী বুধবার দিনব্যাপী ভেড়ামারা আল্ হেরা একাডেমীর মিলনায়তন প্রাঙ্গনে পিঠা উৎসব ও বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক হাসানুজ্জামান খসরু’র মানবজীবনের সফলতা ও জীবন পরিবর্তনের গল্প গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রতিটি স্টলকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে দৃষ্টিনন্দর করে তোলে। প্রতিটি স্টলে ছিল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জাতের পিঠা। শীতকালের হরেক রকম জাতের পিঠার সমারোহে স্টলকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছে অত্র স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জাতের পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন,ভেড়ামারা মড়েল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাঃ আনোয়ার-উল আজিম।
প্রধান অতিথি,কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুকুল।বিশেষ অতিথি ছিলেন, ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব শামীমুল ইসলাম ছানা। বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক তানভীর আহমেদ তাপস।
প্রধান আলোচক ছিলেন,কুষ্টিয়া জর্জ কোর্ট এর সিনিয়র এ্যাডঃ আব্দুল মান্নাফ। ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাত অধ্যক্ষ (অবসর) মোহাঃ আব্দুর রাজ্জাক। ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন,বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য, আল-হেরা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হাসানুজ্জামান খসরু’র।
প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান খসরু বলেন, গ্রাম বাংলার পূরানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজন এর মধ্য দিয়ে জানা অজানা পিঠার সাথে পরিচিত হতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। এমন আয়োজন প্রতিবছর করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংস্কৃতি চর্চা করতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথি, আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুকুল মনে করেন, এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাংলার চিরাচরিত গ্রামীণ পিঠা চেনাজানার পাশাপাশি এসবের স্বাদ পায়। তার আশ্বাস, আগামীতে উপজেলা পর্যায়ে এমন উৎসব করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সকল স্টলে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকার মত পিঠা বিক্রি হয়। স্টল গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দায়িত্বে ছিলেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিউল্লাহ শফিক।
প্রিন্ট