রাজশাহীর তানোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বাড়ছে, বিরাজ করছে উল্টো চিত্র। স্থানীয়রা জানান, তানোরে বিজয়ী নয়, পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা একের পর এক হামলা ভাংচুর চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।
সুত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিযোগীতা করে তানোরে ৪৯ হাজার ১০৯ ভোট এবং গোদাগাড়ীতে ৪৩ হাজার ৩১০ ভোট মোট ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট পান। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তানোরে ৪৩ হাজার ৩১০ ভোট এবং গোদাগাড়ীতে ৬০ হাজার ১৭৩ ভোট মোট এক লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পান। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর চেয়ে ১১ হাজার ১৭৩ ভোট বেশি পেয়ে চতুর্থ বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন ফারুক চৌধুরী। এদিকে গোলাম রাব্বানীর কর্মী- সমর্থকেরা পাড়া-মহল্লার চা স্টলে উসকানিমূলক কথা বলছে। তানোরে ফারুক চৌধুরী বিজয়ী হয়নি গোদাগাড়ীতে ভোট কারচুপি করে এমপি হয়েছে ইত্যাদি উসকানিমূলক কথা বলে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। এমপি পক্ষের কেউ কোনো প্রতিবাদ করলেই তাকে ধরে পেটানো হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারী রোববার দুপুর তানোর পৌর এলাকার কাশিম বাজার তানোর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে রাব্বানীর কর্মী- সমর্থকেরা এমপি ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে কটুক্তি ও তার কর্মী-সমর্থকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এসময় এমপি অনুসারী ৭ নম্বর ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন ও নয়ন আলী এর প্রতিবাদ করেন। এসময় রাব্বানী অনুসারী বুরুজ মহল্লার বাসিন্দা আব্দুস সালামের নির্দেশে তাদের ওপর হামলা চালায় আকচা ফকিরপাড়ার মহল্লার বাসিন্দা শাহিন (২৮), সিজার (৩০), খোকন (২৬), রকি (২৮), হৃদয় (২৭) ও শিমুল (২৫) প্রমুখ। তাদের হামলায় এমপি অনুসারী বুরুজ মহল্লার কুতুব আলীর পুত্র নিশি উদ্দিন (২৩), নাসির উদ্দিন (২৮) ও ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন (২৮) গুরুতর জখম হয়ে তানোর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ভোটের পরদিন ৮ জানুয়ারী নৌকার বিজয়ে কর্মী-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে কাশিম বাজার যান তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল বাসার সুজন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক রামিল হাসান সুইট ও দপ্তর সম্পাদক নাইম উদ্দিন। এ সময় তারা বলেন, এমপি ফারুক চৌধুরীর জায়গায় দোকানপাঠ করে যারা কাঁচি প্রতীকে ভোট দিয়ে বেইমানি করেছেন। তারা দয়া করে এ মাসের মধ্যে সবাই এমপির জায়গা থেকে দোকানপাঠ তুলে নিবেন। এদিকে তাদের এই কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাব্বানী অনুসারী আরব কাউন্সিলর, মাসুদ আলী (৩৫), মাজেদ আলী (৩০), আব্দুস সালাম (৪৫), আসলাম উদ্দিন মিঞা (৫০), ও দুলাল হোসেন (৩৫) প্রমুখগণ হামলা করে এমপি অনুসারী একাধিক কর্মী-সমর্থকদের গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় নাইম উদ্দিন বাদী হয়ে একইদিন তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন ভোট গণনা শেষে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন নৌকা প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৭৬৩ ও কাঁচি প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৬৬৩। তখন প্রকাশনগর মহল্লার মাসুমের নেতৃত্ব কাঁচি প্রতীকের সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে পূনরায় ভোট গণনার জন্য চাপ দেন। পরে পূনরায় ভোট গণনা করা হলেও একই ফলাফল পাওয়া যায়।
এ সময় কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম ও তার পুত্র মাসুমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক বখাটে যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ ও আনসার, পুলিশ আর বিজিবির উপর হামলার ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার পরদিন ৮ জানুয়ারী সোমবার দিবাগত রাতে মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এক পৌর মেয়রপুত্র ও ভাইসহ নামধারী ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তানোর থানায় মামলা করেন।
যার মামলা নম্বর-৬। ওই মামলার সূত্রধরে সোমবার রাতেই মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমানের পুত্র সাদসহ ৭ জনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুর এবং হামলার ঘটনায় মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও কাউন্সিল মুহাম্মাদ হোসেন মন্টু বাদী হয়ে ঘটনার দিন ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে, এই মামলায় বিজ্ঞ আদালত হতে সবাই জামিনে মুক্ত আছেন। অন্যদিকে প্রকাশনগর মহল্লায় এমপি সমর্থক কাওসার আলী রয়েলকে বেধড়ক মারপিট করেছে রাব্বানী অনুসারীরা। এছাড়াও ভোটের পরে প্রত্যেক ইউনিয়ন পৌরসভায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
তবে, নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী গোলাম রাব্বানীর মুঠোফোনে একাধিকবার দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে, কাশিম বাজারে নৌকার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।
প্রিন্ট