ভেড়ামারা পদ্মানদীর ইনটেক চ্যানেলের মুখে চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সেচ পাম্প ভরা মৌসুমে বন্ধ। সেচ পাম্প ১জানুয়ারী চালু করার কথা ছিলো। কিন্তু জিকে খালে পানি না থাকায় খাঁ খাঁ করছে খালটি। ফলে ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি কৃষি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
সেচ পাম্প চালুর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পদ্মায় পানি নেই। পদ্মা থেকে জিকের ইনটেক চ্যানেল দিয়ে পানি সেচ পাম্পের মুখে আনা সম্ভাব হচ্ছে না। এই কারণে জিকে পাম্পের কর্তৃপক্ষ ভরা মৌসুমে পানি সরবরহ করতে পারছে না। পানির অভাবে পাম্প বন্ধ। সেচে পাম্প চালু করতে বহুগুণে ব্যয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মরুকরণের দিকে যাচ্ছে এ অঞ্চল।
পদ্মা নদীতে কাঙ্খিত পানি না থাকায় বোরো মৌসুমে এবারও সঠিক সময় পানি দিতে পারছে না গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। জিকে খালে দ্রুত পানি সরবরাহের দাবী কৃষকসহ সচেতন মহলের।
উল্লেখ্য, ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের একটি চ্যানেল করে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে পাম্প করে তুলে ক্যানেলের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় কৃষি জমিতে সরবরাহ করা হয় জিকে প্রকল্পের মাধ্যমে।
ভেড়ামারা পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জিকে প্রকল্পের প্রধান সেচ পাম্পের সংস্কার কাজ চলছে। জিকে প্রকল্পের প্রধান সরবরাহ খালের তিন নং ব্রিজের কাজ করছে সড়ক বিভাগ। এ কারণে মাটি ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে জিকের প্রধান খালটি। সড়ক বিভাগের কাজ শেষের দিকে, আগামী ৩০ জানুয়ারী খাল উন্মুক্ত করে দেবে বলে তারা জানিয়েছে। সেখানা বাধা। আবার ,খাল উন্মুক্ত হলেও পদ্মায় পানি প্রবাহ এখন অনেক কম। প্রকল্পের চ্যানেলে এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে ৪ দশমিক ৫ আরএল মিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এখন গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৭ আরএল মিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে। এতো কম পানি দিয়ে পাম্প চালানো সম্ভব নয়। এ জন্য আগামীকাল সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর জোনে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে প্রকৌশলীরা বৈঠকে বসবেন।
জিকে প্রকল্প একসময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জি- কে) প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হতে হতে এখন ৮ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে। পাম্প নষ্ট ও খালগুলো দখল-দূষণ হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এ সেচ প্রকল্প।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কুষ্টিয়ার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, ৪ জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু এই প্রকল্পের। এর স্বর্ণযুগে ১৯৮৩ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে এর আওতায় ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু খালগুলোর বড় অংশ দখলে থাকা ও প্রকল্পের তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটিই নষ্ট হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। রাশিদুর রহমান আরো জানান, চার জেলার ১৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত।
প্রকল্পে প্রধান তিনটি খাল, ৪৯টি শাখা খাল ও ৪৪৪টি উপশাখা খাল রয়েছে। প্রধান খালের দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটার। শাখা খালগুলোর দৈর্ঘ্য ৪৬৭ কিলোমিটার ও উপশাখা খালের দৈর্ঘ্য হাজার কিলোমিটার। ১৯৫১ সালে পরিচালিত প্রাথমিক জরিপের পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
এ প্রকল্পের আওতায় বছরে ৬০০ টাকায় ১ একর জমিতে ৩ মৌসুমে সেচ দিতে পারেন কৃষকরা। স্যালো মেশিন কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্প চালিয়ে সমান পরিমাণ জমিতে সেচ দিতে কৃষকের ব্যয় হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো।
প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, শুষ্ক সময়ে এখানে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। অনেক এলাকায় পানি ওঠেই না। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুসহ অনেক এলাকায় জিকে না দিলে মানুষ খাওয়ার পানিও পায় না। জিকের পানি উপরিভাগে থাকায় পানির স্তর সাধারণত কিছুটা উঁচুতে থাকে। জিকের পানি না থাকলেও স্তর অনেক নিচে নেমে যায়।
- আরও পড়ুনঃ তানোরের প্রকাশনগর অবৈধ মটরের ছড়াছড়ি
কৃষকরা বলছেন, জিকে সেচ খালের পানি দিয়ে ধানের আবাদ করতে যেখানে খরচ হয় ৩০০ টাকা, সেখানে ডিজেল চালিত পাম্পের পানি দিয়ে আবাদ করতে লাগছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তাছাড়া জিকে খালের পানিতে ধানের ফলনও বেশি হয়। তাই ভরা মৌসুমে দ্রুত জিকের পানি সরবরাহের দাবি তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পানি সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কিন্তু পদ্মায় পানির স্তর অনেক কম থাকায় পাম্পে প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিকে প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়লে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এ অঞ্চলের কৃষি।
প্রিন্ট