মৃদুভাষী সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে ঘুরে বেড়াতেন এই ডেস্ক থেকে সেই ডেস্কে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের সম্প্রসারণ করেছেন। এ সংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। প্রকল্পের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকতেন। দীর্ঘ সময় বসে থাকতেন মন্ত্রী সচিব অতিরিক্ত সচিবদের রুমের সামনে। যুগ্মসচিব বা উপসচিবদের টেবিলের সামনেও তাকে নিয়মিত বসে থাকতে দেখা গেছে। ফাইল হাতে বসে নিচুস্বরে কথা বলতেন তিনি। প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় ছাড় করানোর জন্য তিনি নিয়মিত ধর্ণা দিতেন কর্তা ব্যক্তিদের কাছে।
সেই সামন্ত লাল সেন আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি যাদের টেবিলের সামনে ফাইল হাতে বসে থাকতেন তারাই মন্ত্রীর সামনে ফাইল হাতে দাড়াবেন। এটা ভেবে মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা রোমাঞ্চিত। তারা মনে করেন বার্ণ ইউনিটকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি যে দক্ষতা দেখিয়েছেন মন্ত্রনালয় পরিচালনায়ও তিনি সমান পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন। তার ওপর আস্থা আছে পুরো চিকিৎসক সমাজের।
ফাইল হাতে মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সামন্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) অফিসের কাজে গিয়েছি। আমার সামনে ফাইলটা একজন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, কিসের বার্ন, বাংলাদেশে কোনো বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন নেই।’
নতুন দায়িত্ব পেয়ে কেমন লাগছে এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যে সামন্ত আছি, তাই থাকতে চাই। মন্ত্রীত্ব আমাকে বদলে দেবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একজন নন-ক্যাডার কর্মকতা জানান, ডা. সামন্তকে তিনি চেনেন ২০১২ সাল থেকে। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে যেতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। পরে তাকে বার্ণ ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দায়িত্ব পাওয়ার পরের ঘটনা ইতিহাস। তিনি বার্ণ ইউনিটকে আলাদা ইনস্টিটিউটে পরিণত করেছেন। এর জন্য সামন্ত লাল সেনকে অমানুষিক শ্রম দিতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের এই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আরো জানান, অনেক সময় সামন্ত লাল সেন বসার চেয়ারও পেতেন না। তখন তিনি বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন। সংশ্লিষ্ট চিঠি হলে তা নিজেই রিসিভ করে হাসপাতালে ফিরতেন। নেপথ্যে থেকে তাকে এই কাজে সাহস যোগাতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। ব্যক্তিজীবনে মিতব্যায়ী ডা. সামন্ত প্রকল্পেও মিতব্যয়ী ছিলেন। রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার পরও তিনি মিতব্যয়ীই থাকবেন বলে এই নন-ক্যডার কর্মকতার বিশ্বাস।