ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

শুরুতেই থুবড়ে পড়ল ৩ কিংস পার্টি

-বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।

 

এবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন প্রার্থী লড়েছেন ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীক নিয়ে ৭৯ জন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে ৫৬জন প্রার্থী অংশ নিলেও সব গুলো আসনেই মুখ থুবড়ে পড়েছেন কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই ৩ দলের প্রার্থীরা। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী ও বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ছাড়া বাকী প্রায় সব প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন।

এই ৩ দলের এমন ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ছাড়া ৩ কিংস পার্টির বড় কোনো নেতার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অতীত রেকর্ড নেই। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির তো কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউণ্ডও নেই। এমনকি তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা আগে যে দল করতেন সেই দলের নেতা ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফলে স্থানীয় রাজনীতি ও ভোটের মারপ্যাঁচ তারা বুঝে উঠতে পারেননি। তৃণমূল ও বিএনএমের যেহেতু দল হিসেবে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না ফলে দেশের কোথাও তাদের কোনো ভোটার ছিল না। যা স্পষ্ট হয়েছে ভোটকেন্দ্রে। এই ৩ দলের বড় নেতারাই নিজেদের বেশীরভাগ কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ৩টি দলই  আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু এবার কাউকে জিতিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব নেয়নি ফলে ভোটের মাঠে তাদের ভরাডুবি ঘটেছে। সুপ্রিম পার্টির একজন প্রার্থীর ও রাজনৈতিক পরিচয় না থাকায় তাদের জয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। নির্বাচনে যে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে তার একটা বড় অংশের ভোটাররা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের। এর বাইরে যারা ভোট কেন্দ্রে যান তারাও সরকারের সুবিধাভোগী। ফলে তৃণমূল ও বিএনএম প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। আলোচনায় থাকা তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা মূলত বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় পদত্যাগ করেছেন কিংবা বহিষ্কার হয়েছেন তাই বিএনপির যেসব ভোটাররা ভোট দিতে গিয়েছিলেন তারাও ক্ষোভ থেকে এই প্রার্থীদের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

তারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে এই ৩ দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন; ফলে সাধারণ ভোটাররা তাদের সন্দেহের চোখে দেখে ফলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটাররাও স্বতন্ত্র কিংবা অন্য প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তরুণ যে ভোটাররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের আকৃষ্ট করার মতো কোনো কার্যক্রম দল হিসেবে তারা হাতে নেয়নি।

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, রাজার যখন রাজত্ব চলে যায় তখন প্রজাতন্ত্রও যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য রাজারা এ ধরনের দল তৈরি করতো। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিতে তাৎক্ষণিকভাবে এই ৩ টি দল গড়ে ওঠে। আমি মনে করি, রাজনীতিতে এদের দলের মর্যাদা দেওয়াই উচিৎ না। যারা কিছু পাওয়ার আশায় নির্বাচনের আগে দল গঠন করে এই ফলাফল তাদের জন্য শিক্ষা। জনগণ যেহেতু তাদের ধান্ধা বুঝতে পারছে তাই সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা ইতিবাচক।

 

প্রয়াত মন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন তার মেয়ে অন্তরা হুদা। তাকে সরিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলনে চেয়ারপার্সন হন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এবং মহাসচিব হন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনের আগে  তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা নির্বাচনে জিতে সংসদে বিরোধী দল গঠনের কথা বলে হইচই ফেলে দেন। তারা বিএনপির কিছু সাবেক এমপি ও নেতাদের নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন যা তাদের সরকারের কাছে মূল্যহীন করে তুলে। ফলে আওয়ামী লীগ কয়েকটি দলকে আসন ছেড়ে দিলেও তাদের জন্য ছাড় দেয়নি। ব্যার্থ হয়ে এই দুই দলের নেতারা জয়ের আশ্বাসের চেষ্টা করেন কিন্ত সরকার কাউকে জিতিয়ে আনতে রাজী হয়নি।

 

সিলেট ৬ আসন থেকে তৃণমূলের চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। অল্পের জন্য তার জামানত রক্ষা হয়। এই আসনে বড় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তৃণমূলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের আগে বড় বড় গল্প শুনিয়েছিলেন। সংসদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তৈমুর আলম শেষ পর্যন্ত জামানত হারিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করা তৈমুর মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। রাজনীতিতে গলাবাজ এই নেতা তার অনেকগুলো কেন্দ্রে এজেন্ট ও দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রে তার আশেপাশে প্রত্যাশিত জনগণকেও দেখা যায়নি। অনেকটা একা একাই তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরেছেন। তার আসনে  ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

 

আরেক কিংস পার্টি বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। ৪ বারের এমপি আবু জাফর এ নিয়ে ৫ বার দল বদল করে আলোচনায় ছিলেন। সাবেক এমপি হওয়ায় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি জয় পেতে পারেন। গুঞ্জন ছিল তাকে আসন ছেড়ে দিলেও সরকার জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারে; কিন্ত তা হয়নি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান এক লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোটের বিপরীতে আবু জাফর ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন (ঈগল) ৮৪ হাজার ৯৮৯ ভোট পেয়ে ২য় হন।  বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান চাঁদপুর-৪ আসনের প্রার্থী হয়ে ১ হাজার ৭৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী সক্রিয় ছিল বলে আলোচনা থাকলেও তিনি নির্বাচনে জিততে পারেননি। ভাণ্ডারী পরিবারে বিভক্তি থাকায় তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। এই আসনে ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। সাইফুদ্দিন ভাণ্ডারী ৩ হাজার ১৩৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

 

তৃণমূলের মহাসচিব তৈমুর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। আমি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। দলের চেয়ারপারসন শমসের মবিন সিলেটে আছেন উনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের দলীয় অবস্থান জানাবো।

বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান বলেন, এখনই নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমাদের দলীয় মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করব।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

তানোরে হিমাগারে রাখা আলুতে গাছ

error: Content is protected !!

শুরুতেই থুবড়ে পড়ল ৩ কিংস পার্টি

আপডেট টাইম : ০৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪

 

এবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন প্রার্থী লড়েছেন ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীক নিয়ে ৭৯ জন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে ৫৬জন প্রার্থী অংশ নিলেও সব গুলো আসনেই মুখ থুবড়ে পড়েছেন কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই ৩ দলের প্রার্থীরা। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী ও বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ছাড়া বাকী প্রায় সব প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন।

এই ৩ দলের এমন ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ছাড়া ৩ কিংস পার্টির বড় কোনো নেতার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অতীত রেকর্ড নেই। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির তো কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউণ্ডও নেই। এমনকি তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা আগে যে দল করতেন সেই দলের নেতা ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফলে স্থানীয় রাজনীতি ও ভোটের মারপ্যাঁচ তারা বুঝে উঠতে পারেননি। তৃণমূল ও বিএনএমের যেহেতু দল হিসেবে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না ফলে দেশের কোথাও তাদের কোনো ভোটার ছিল না। যা স্পষ্ট হয়েছে ভোটকেন্দ্রে। এই ৩ দলের বড় নেতারাই নিজেদের বেশীরভাগ কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ৩টি দলই  আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু এবার কাউকে জিতিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব নেয়নি ফলে ভোটের মাঠে তাদের ভরাডুবি ঘটেছে। সুপ্রিম পার্টির একজন প্রার্থীর ও রাজনৈতিক পরিচয় না থাকায় তাদের জয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। নির্বাচনে যে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে তার একটা বড় অংশের ভোটাররা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের। এর বাইরে যারা ভোট কেন্দ্রে যান তারাও সরকারের সুবিধাভোগী। ফলে তৃণমূল ও বিএনএম প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। আলোচনায় থাকা তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা মূলত বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় পদত্যাগ করেছেন কিংবা বহিষ্কার হয়েছেন তাই বিএনপির যেসব ভোটাররা ভোট দিতে গিয়েছিলেন তারাও ক্ষোভ থেকে এই প্রার্থীদের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

তারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে এই ৩ দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন; ফলে সাধারণ ভোটাররা তাদের সন্দেহের চোখে দেখে ফলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটাররাও স্বতন্ত্র কিংবা অন্য প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তরুণ যে ভোটাররা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের আকৃষ্ট করার মতো কোনো কার্যক্রম দল হিসেবে তারা হাতে নেয়নি।

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, রাজার যখন রাজত্ব চলে যায় তখন প্রজাতন্ত্রও যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য রাজারা এ ধরনের দল তৈরি করতো। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিতে তাৎক্ষণিকভাবে এই ৩ টি দল গড়ে ওঠে। আমি মনে করি, রাজনীতিতে এদের দলের মর্যাদা দেওয়াই উচিৎ না। যারা কিছু পাওয়ার আশায় নির্বাচনের আগে দল গঠন করে এই ফলাফল তাদের জন্য শিক্ষা। জনগণ যেহেতু তাদের ধান্ধা বুঝতে পারছে তাই সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা ইতিবাচক।

 

প্রয়াত মন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন তার মেয়ে অন্তরা হুদা। তাকে সরিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলনে চেয়ারপার্সন হন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এবং মহাসচিব হন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনের আগে  তৃণমূল ও বিএনএম নেতারা নির্বাচনে জিতে সংসদে বিরোধী দল গঠনের কথা বলে হইচই ফেলে দেন। তারা বিএনপির কিছু সাবেক এমপি ও নেতাদের নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন যা তাদের সরকারের কাছে মূল্যহীন করে তুলে। ফলে আওয়ামী লীগ কয়েকটি দলকে আসন ছেড়ে দিলেও তাদের জন্য ছাড় দেয়নি। ব্যার্থ হয়ে এই দুই দলের নেতারা জয়ের আশ্বাসের চেষ্টা করেন কিন্ত সরকার কাউকে জিতিয়ে আনতে রাজী হয়নি।

 

সিলেট ৬ আসন থেকে তৃণমূলের চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। অল্পের জন্য তার জামানত রক্ষা হয়। এই আসনে বড় জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তৃণমূলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের আগে বড় বড় গল্প শুনিয়েছিলেন। সংসদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তৈমুর আলম শেষ পর্যন্ত জামানত হারিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করা তৈমুর মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। রাজনীতিতে গলাবাজ এই নেতা তার অনেকগুলো কেন্দ্রে এজেন্ট ও দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রে তার আশেপাশে প্রত্যাশিত জনগণকেও দেখা যায়নি। অনেকটা একা একাই তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরেছেন। তার আসনে  ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

 

আরেক কিংস পার্টি বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। ৪ বারের এমপি আবু জাফর এ নিয়ে ৫ বার দল বদল করে আলোচনায় ছিলেন। সাবেক এমপি হওয়ায় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি জয় পেতে পারেন। গুঞ্জন ছিল তাকে আসন ছেড়ে দিলেও সরকার জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারে; কিন্ত তা হয়নি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান এক লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোটের বিপরীতে আবু জাফর ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন (ঈগল) ৮৪ হাজার ৯৮৯ ভোট পেয়ে ২য় হন।  বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান চাঁদপুর-৪ আসনের প্রার্থী হয়ে ১ হাজার ৭৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী সক্রিয় ছিল বলে আলোচনা থাকলেও তিনি নির্বাচনে জিততে পারেননি। ভাণ্ডারী পরিবারে বিভক্তি থাকায় তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। এই আসনে ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। সাইফুদ্দিন ভাণ্ডারী ৩ হাজার ১৩৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

 

তৃণমূলের মহাসচিব তৈমুর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। আমি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। দলের চেয়ারপারসন শমসের মবিন সিলেটে আছেন উনার সঙ্গে কথা বলে আমাদের দলীয় অবস্থান জানাবো।

বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান বলেন, এখনই নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমাদের দলীয় মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করব।