ভুল অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সেই ‘নিরাময় নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় নিয়মনীতি না মেনে সেবার নামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করায় ১ লাখ টাকা জরিমাণা করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। এছাড়াও জাহানারা সেবা ক্লিনিকেও ৩০ হাজার টাকা জরিমাণা করা হয়।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জিল্লুর রহমান, কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান, আরএমও আমিনুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে রোববার দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কাশিয়ানীতে সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, ২লাখ টাকায় রফা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে বিষয়টি নজরে আসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমের সুবাদে প্রসূতি মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের নজর আসে। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। নিয়মনীতি না মানা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ও সেবার নামে রোগীর সাথে প্রতারণা করায় ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে ওই ক্লিনিককে ১ লাখ টাকা জরিমাণা করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চিকিৎসাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রসূতি মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা ক্লিনিক পরিদর্শন করি। সেখানে দেখি ক্লিনিক মালিক আসলামুজ্জামান কামাল নিজেই অজ্ঞান ও অস্ত্রোপচার করেন। আসলে এ ধরণের অস্ত্রোপচার করার কোনো এখতিয়ার তার নেই; যা রোগীদের সাথে প্রতারণার শামিল। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে জেল দেওয়া হয়নি। তবে ১ লাখ জরিমাণা ও সাময়িকভাবে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার রামপুরা গ্রামের প্রসূতি মাসুরা বেগমকে সিজার করতে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর ২টায় মাসুরা বেগমকে অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ক্লিনিক মালিক ও ডা. আসলামুজ্জামান অস্ত্রোপচার করেন। ১৫ মিনিট পর জন্ম নেয়া নবজাতক শিশুকে অপারেশন থিয়েটার থেকে জীবিত বের করা হয়। পৌনে ১ ঘন্টা পর মাসুরা বেগমকে অচেতন অবস্থায় অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে কেবিনে আনা হয়। দীর্ঘ সময় পরও জ্ঞান না ফেরায় স্বজনদের সন্দেহ হয়। পরে স্বজনরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ঘটনার পর ওই রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মারা যাওয়া প্রসূতির স্বজনদের সাথে ২ লাখ টাকায় রফাদফা করেন।