বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে শতাধিক শুঁটকিপল্লী রয়েছে। মিষ্টি পানির দেশি মাছের শুঁটকিপল্লী বলে পরিচিত তালতলীর আশার চর। এ শুঁটকিপল্লীতে জেলেদের মাঝে বর্তমানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পল্লীতে এখন সারি সারি শুকানো হচ্ছে নানা জাতের মাছ। এই পল্লী থেকেই খাবার উপযোগী হয়ে শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশ-বিদেশে।
কোনো কীটনাশক ছাড়া শুধু মাত্র লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর রয়েছে আলাদা স্বাদ এবং চাহিদা। তবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন থাকেন জেলেরা।
জানা যায়, আশারচর, সোনাকাটা, ফকিরহাট, জয়ালভাঙ্গা চরে অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র—এ পাঁচ মাস শুঁটকিপল্লী সরব থাকে ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে। এই এলাকায় শতাধিক শুঁটকি পল্লীতে ১২ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
প্রতিটি পল্লী থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৬০ মণ শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে কাঁচা মাছ পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকেরা তা পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। নদী থেকে চিংড়ি, লইট্টাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ একসঙ্গে কিনতে হয়। শুকানোর পর দুই-আড়াই কেজি শুঁটকি বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ থাকে। এখানের শুঁটকিতে কোনো ধরনের বিষ-কীটনাশক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার, মাইট্যা ৬০০ থেকে এক হাজার, লইট্টা ৮০০ থেকে ৯০০,চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানকার মাছের গুঁড়ি সারা দেশে পোলট্রি ফার্ম ও ফিশ ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তালতলীর আশার চর শুঁটকিপল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলে ও মালিক পক্ষ মিলে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ কাজ করছেন। সেখানে প্রায় ৩০টি ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। পল্লীতে কেউ মাছ মাচায় রাখছেন, কেউ মাচায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউবা শুকনো মাছ কুড়িয়ে জমা করছেন।
আশার চর শুঁটকিপল্লীর নারী শ্রমিক সাজেদা বেগম বলেন, “সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাত্র ৩০০ টাকা বেতন পাই। এ টাকা দিয়ে তো আর পরিবার চলে না। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ভাতা কিংবা অনুদান পাইনি।”
আশার চর শুঁটকিপল্লীর হানিফ বলেন, “নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় এই বছর শুঁটকি উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। সরকারিভাবে দেশে বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি হলে খুব লাভবান হওয়া যাবে।”
আশার চর শুঁটকি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখানে শুঁটকি শুকানো শুরু করেছি। সাগর পাড়ে শুঁটকি খুব ভালো শুকায়। তাই বাধ্য হয়ে এখানে টং পেতেছি। স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করলে বছরের বারো মাস এ ব্যবসা করতে পারতাম।”
- আরও পড়ুনঃ চলনবিলে শুঁটকি মাছ উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ
তালতলী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার বলেন, এ উপজেলা শুটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। এই পেশাকে আরও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রিন্ট