ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালি

বালুর নিচে অর্ধশত বাড়ি, বহু মানুষ আশ্রয়হীন

কথা ছিল পাকা বাড়ির সামনে দিয়ে বাঁধ তৈরি করে বালু ফেলা হবে, যেন কারও কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু করা হয়েছে উল্টো। রাতের আঁধারে স্থানীয়দের ঘরের চারপাশে বালু ফেলে চাল পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পরিকল্পনাহীন খামখেয়ালি কর্মকান্ডে বালুতে ডুবে গেছে প্রায় ৫০টি বাড়ি। এতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে দেড় শতাধিক পরিবার।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় ৫০টি কাঁচা-পাকা বাড়ির ঘরের চালা সমান করে বালু ফেলা হয়েছে। বালুতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, বাথরুম, রান্নাঘরসহ সবকিছু। অনেক পরিবারে রান্নার হাঁড়ি চড়েনি। তারা না খেয়ে আছেন। রান্না করার কোনো জায়গায়ও নেই।

স্থানীয়রা জানান, জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) খাল খননের জন্য খালের তীরবর্তী সব জলাশয় ভরাট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল পাউবো। বালু দিয়ে জলাশয় ভরাটের শুরুতে পাউবোর অধিগ্রহণ করা সম্পত্তির ওপর প্রথমে বালু ফেলা হয়।

পরে বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ির ভেতরে বালু ফেলা শুরু করে। এতে ঘরের চাল পর্যন্ত বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বসতবাড়িগুলো।

জানা যায়, সরকারি খাল খননের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এখানকার পরিবারগুলো বাড়িঘর ভেঙে চলে যায় গড়াই নদীর পাশে।

ভুক্তভোগী সুজন আলী বলেন, বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় জিকে খাল খননের জন্য খালের তীরবর্তী সব জলাশয় ভরাট করার প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শুরুতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ করা সম্পত্তির ওপর বালু ফেলা হয়। পরে বসতবাড়ির দিকে বালু ফেললে নিষেধ করা হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে বালু ফেলে বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ির ঘরের চাল পর্যন্ত ভরাট করে ফেলে তারা।

এতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আমাদের বাড়িগুলো। চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন রিন্টু বলেন, জিকের খাল খননের সময় পাড় বাঁধার জন্য ড্রেজার দিয়ে জলাশয় ভরাট করার কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের পাশে তাদের অধিগ্রহণ করা সম্পত্তি ছাড়াও জনগণের সম্পত্তির ওপর বসতবাড়িতে বালু ফেলেছে। এতে বহু মানুষ বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং শাখা) তাজমির হোসেন বলেন, আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম পুকুর ভরাট করতে। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে বসতবাড়ির চালা পর্যন্ত বালু ভরাট করা হয়েছে। আমি স্বীকার করছি এটা অন্যায় ও অপরাধ। যে কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, অফিস খুললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাই তারাই এ সমস্যার সমাধান করবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

error: Content is protected !!

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালি

বালুর নিচে অর্ধশত বাড়ি, বহু মানুষ আশ্রয়হীন

আপডেট টাইম : ১০:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ :

কথা ছিল পাকা বাড়ির সামনে দিয়ে বাঁধ তৈরি করে বালু ফেলা হবে, যেন কারও কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু করা হয়েছে উল্টো। রাতের আঁধারে স্থানীয়দের ঘরের চারপাশে বালু ফেলে চাল পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পরিকল্পনাহীন খামখেয়ালি কর্মকান্ডে বালুতে ডুবে গেছে প্রায় ৫০টি বাড়ি। এতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে দেড় শতাধিক পরিবার।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় ৫০টি কাঁচা-পাকা বাড়ির ঘরের চালা সমান করে বালু ফেলা হয়েছে। বালুতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, বাথরুম, রান্নাঘরসহ সবকিছু। অনেক পরিবারে রান্নার হাঁড়ি চড়েনি। তারা না খেয়ে আছেন। রান্না করার কোনো জায়গায়ও নেই।

স্থানীয়রা জানান, জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) খাল খননের জন্য খালের তীরবর্তী সব জলাশয় ভরাট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল পাউবো। বালু দিয়ে জলাশয় ভরাটের শুরুতে পাউবোর অধিগ্রহণ করা সম্পত্তির ওপর প্রথমে বালু ফেলা হয়।

পরে বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ির ভেতরে বালু ফেলা শুরু করে। এতে ঘরের চাল পর্যন্ত বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বসতবাড়িগুলো।

জানা যায়, সরকারি খাল খননের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এখানকার পরিবারগুলো বাড়িঘর ভেঙে চলে যায় গড়াই নদীর পাশে।

ভুক্তভোগী সুজন আলী বলেন, বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় জিকে খাল খননের জন্য খালের তীরবর্তী সব জলাশয় ভরাট করার প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শুরুতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ করা সম্পত্তির ওপর বালু ফেলা হয়। পরে বসতবাড়ির দিকে বালু ফেললে নিষেধ করা হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে বালু ফেলে বহলা গোবিন্দপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ির ঘরের চাল পর্যন্ত ভরাট করে ফেলে তারা।

এতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আমাদের বাড়িগুলো। চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন রিন্টু বলেন, জিকের খাল খননের সময় পাড় বাঁধার জন্য ড্রেজার দিয়ে জলাশয় ভরাট করার কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের পাশে তাদের অধিগ্রহণ করা সম্পত্তি ছাড়াও জনগণের সম্পত্তির ওপর বসতবাড়িতে বালু ফেলেছে। এতে বহু মানুষ বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং শাখা) তাজমির হোসেন বলেন, আমরা নির্দেশ দিয়েছিলাম পুকুর ভরাট করতে। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে বসতবাড়ির চালা পর্যন্ত বালু ভরাট করা হয়েছে। আমি স্বীকার করছি এটা অন্যায় ও অপরাধ। যে কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, অফিস খুললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাই তারাই এ সমস্যার সমাধান করবে।


প্রিন্ট