ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নাগেশ্বরীতে ভূয়া সনদধারী শিক্ষকের ছড়াছড়ি

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় জাল ও ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের ছড়াছড়িতে উদিগ্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী। শিক্ষক নিয়োগকালীন সময়ে বা পরে নিয়োগ বোর্ড, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জাল সনদ সনাক্তে অথবা ধরতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায়, যে যার মতো ম্যানেজ করে যুক্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকতা নামের মহান পেশায়।
মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভূয়া সনদপত্র সংগ্রহে সহায়তা করা ও নিয়োগে শিক্ষকদের ঘুষ লেনদেন আর নিয়মের ফাঁক গলে তাদের সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানী সূত্র ও ব্যানবেইজ (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরো এবং এনটিআরসিএ বা বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে উপজেলার বিশটির মতো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রায় চল্লিশের অধিক জন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভূয়া সনদপত্রে শিক্ষক হিসেবে নাম লিখিয়ে সরকারি বেতন- ভাতা তুলে শিক্ষকতা করে চলেছেন বছরের পর বছর।
শিক্ষানুরাগীদের মতে, এসব শিক্ষক নামের প্রতারকের কবলে নতুন প্রজন্ম শিক্ষার আলোর পরিবর্তে পতিত হচ্ছে অন্ধকারে। শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিম্নগামী হওয়ার আশংঙ্কাকে জাল সনদধারী শিক্ষকদের দায়ী করছেন তারা। ব্যানবেইজ থেকে এনটিআরসিএ’র সনাক্তকৃত ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশিত পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা শিক্ষা কার্যালয়ের ধীরগতি ও উদাসীনতাও দায়ী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
উল্লেখ্য যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ জুন ২০২৩ এ জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো ১৩ জন জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা, এমপিও বন্ধ, চাকুরিচ্যুত, বেতন ভাতা আদায়সহ ৭ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিবলে সিংহভাগ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তালিকায় নাম থাকা নাখারগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মর্তুজা আক্তার ও হাচনে বানু স্বপেশায় এখনও বহাল রয়েছেন। তারা জানান, স্বপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নুর ইসলাম তাদের বিষয়টি দেখভাল করছেন। বিষয়টি স্বীকারও করেন তিনি।
অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় জাল সনদধারী ঐ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে প্রধান শিক্ষককে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। এদিকে অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ ও এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইক্রমে জাল ও ভূয়া সনদধারী শিক্ষক রয়েছেন বুড়িরহাট দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ৭ এর অধিক। খামার হাসনাবাদ ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ৪ জন, ভিতরবন্দ ফাজিল মাদ্রাসায় ৪ জন, সাপখাওয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ২ জন ও গোপালপুর পীরবারী দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা, পূর্ব সুখাতি দাখিল মাদ্রাসা, গোলেরহাট ফাজিল মাদ্রাসা, বড়বারি দাখিল মাদ্রাসা, পশ্চিম পায়রাডাংগা সিনিয়র মাদ্রাসা এবং এনামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসায় একাধিক জন থাকার অভিযোগ করেছে।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বিষয় গুলো অবগত নয়। তবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসার সামছুল আলম বলেন, ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওসার আহমেদ (নবাগত) জানান, এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম দায়সাড়া বক্তব্যে বলেন, ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের একতিয়ার নেই। এসব বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

নাগেশ্বরীতে ভূয়া সনদধারী শিক্ষকের ছড়াছড়ি

আপডেট টাইম : ১০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
জেলাল আহম্মদ রানা, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় জাল ও ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের ছড়াছড়িতে উদিগ্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী। শিক্ষক নিয়োগকালীন সময়ে বা পরে নিয়োগ বোর্ড, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জাল সনদ সনাক্তে অথবা ধরতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায়, যে যার মতো ম্যানেজ করে যুক্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকতা নামের মহান পেশায়।
মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভূয়া সনদপত্র সংগ্রহে সহায়তা করা ও নিয়োগে শিক্ষকদের ঘুষ লেনদেন আর নিয়মের ফাঁক গলে তাদের সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানী সূত্র ও ব্যানবেইজ (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরো এবং এনটিআরসিএ বা বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে উপজেলার বিশটির মতো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রায় চল্লিশের অধিক জন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভূয়া সনদপত্রে শিক্ষক হিসেবে নাম লিখিয়ে সরকারি বেতন- ভাতা তুলে শিক্ষকতা করে চলেছেন বছরের পর বছর।
শিক্ষানুরাগীদের মতে, এসব শিক্ষক নামের প্রতারকের কবলে নতুন প্রজন্ম শিক্ষার আলোর পরিবর্তে পতিত হচ্ছে অন্ধকারে। শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিম্নগামী হওয়ার আশংঙ্কাকে জাল সনদধারী শিক্ষকদের দায়ী করছেন তারা। ব্যানবেইজ থেকে এনটিআরসিএ’র সনাক্তকৃত ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশিত পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা শিক্ষা কার্যালয়ের ধীরগতি ও উদাসীনতাও দায়ী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
উল্লেখ্য যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ জুন ২০২৩ এ জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো ১৩ জন জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা, এমপিও বন্ধ, চাকুরিচ্যুত, বেতন ভাতা আদায়সহ ৭ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিবলে সিংহভাগ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তালিকায় নাম থাকা নাখারগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মর্তুজা আক্তার ও হাচনে বানু স্বপেশায় এখনও বহাল রয়েছেন। তারা জানান, স্বপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নুর ইসলাম তাদের বিষয়টি দেখভাল করছেন। বিষয়টি স্বীকারও করেন তিনি।
অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় জাল সনদধারী ঐ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে প্রধান শিক্ষককে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। এদিকে অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ ও এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইক্রমে জাল ও ভূয়া সনদধারী শিক্ষক রয়েছেন বুড়িরহাট দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ৭ এর অধিক। খামার হাসনাবাদ ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ৪ জন, ভিতরবন্দ ফাজিল মাদ্রাসায় ৪ জন, সাপখাওয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় ২ জন ও গোপালপুর পীরবারী দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা, পূর্ব সুখাতি দাখিল মাদ্রাসা, গোলেরহাট ফাজিল মাদ্রাসা, বড়বারি দাখিল মাদ্রাসা, পশ্চিম পায়রাডাংগা সিনিয়র মাদ্রাসা এবং এনামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসায় একাধিক জন থাকার অভিযোগ করেছে।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বিষয় গুলো অবগত নয়। তবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসার সামছুল আলম বলেন, ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওসার আহমেদ (নবাগত) জানান, এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম দায়সাড়া বক্তব্যে বলেন, ভূয়া সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের একতিয়ার নেই। এসব বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

প্রিন্ট