প্রবাসী আয় সংগ্রহের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টি ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে কোনো ব্যাংক চাইলে তা করতে পারবে। গত সপ্তাহে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) যৌথ সভায় এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া আইএমএফের শর্ত মানতে ডলারের একক দর কার্যকরে ওই সভায় জোর দেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে সোমবার বাফেদার পক্ষ থেকে সব ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই ডলারের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়নি। তবে কোনো ব্যাংক চাইলে এখন থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। বিষয়টি কোনো ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এই প্রণোদনার খরচ ওই ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের সময় ডলারের ক্ষেত্রে একক দর কার্যকর করার শর্ত আরোপ করে। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ মিশনও ডলারের একক দর কার্যকর করতে আবারও ওই শর্ত বাস্তবায়ন করার তাগিদ দেয়। ডিসেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই শর্ত বাস্তবায়নে তৎপর হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর এবিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
বাফেদার চিঠিতে বলা হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই ডলার বিক্রিতে একই দর অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর ডলার বিক্রির দর হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এই দামে আমদানির এলসি, বিদেশে পড়াশোনার শিক্ষার্থীদের ফি পরিশোধ, রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশে রেমিট্যান্স নেওয়া, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য দেনা পরিশোধে ডলার বিক্রি করতে হবে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার থাকবে, সেগুলো তারা আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ও দেশে আসা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা করে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ ব্যাংকগুলোও ইচ্ছা করলে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। এতে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫৭ পয়সা। প্রণোদনা আড়াই শতাংশ অর্থ ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হবে। এ খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে তার আলাদা হিসাব রাখতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আগাম ডলার বেচাকেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা অনুসরণ করতে হবে। ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ যোগ করে আগাম ডলারের দাম নির্ধারণ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হার বর্তমানে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এতে ৫ শতাংশ যোগ করলে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই হারে এক বছর মেয়াদি ডলার আগাম বেচাকেনার ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো যাবে। এ হিসাবে এক বছর মেয়াদে আগাম বেচাকেনার ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা ৪৫ পয়সা।
প্রিন্ট