সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে সড়কপথে ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পৌঁছেছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম বহনকারী কনটেইনার। শুক্রবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে এই গাড়িবহর রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছায়। পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে সড়কপথে রওয়ানা হয় ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িবহর। পথে গাজীপুরে ১ ঘণ্টা যাত্রাবিরতি দেয়। পরে সেখান থেকে ৭টার দিকে গাড়িবহর ঈশ্বরদীর দিকে রওয়ানা দেয়। পাকশীসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জাতীয় পতাকা হাতে গাড়িবহরকে স্বাগত জানায়।
ইউরেনিয়াম নিয়ে আসার জন্য সড়কপথে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করে প্রশাসন। ঢাকা থেকে রূপপুর পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। ঢাকা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুক্রবার ভোর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে রাশিয়া থেকে আকাশপথে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান। শুক্রবার রূপপুরে ইউরেনিয়াম এসে পৌঁছালেও রূপপুর প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় প্রকল্প ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা পেয়েছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর। পরের বছর দুটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। মোট ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এখানে।
দেশের মানুষ তাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৫ অক্টোবর দুপুরে ভার্চুয়ালি এক বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা-রোসাটম এবং রূপপুর প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসিওর ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ রোসাটম ও প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, রাশিয়া থেকে বিশেষ বিমানে সাতটি চালানের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম বাংলাদেশে আনা হয়েছে। যা দিয়ে এক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এরপর ধাপে ধাপে জ্বালানি আসবে। গ্রিডলাইন প্রস্তুত হওয়ার পর চুল্লিতে জ্বালানি লোড করা হবে। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে ২ মাস লাগবে। উৎপাদন শুরুর পর পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে ৯ থেকে ১০ মাস লাগবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় জ্বালানি এসে পৌঁছালে তখন দেশটি আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই হিসাবে এই অক্টোবরে বাংলাদেশও আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হওয়ার সম্মান অর্জন করছে।
৫ অক্টোবর রাশিয়া বাংলাদেশের কাছে ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের পর শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরীক্ষা। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবর জানান, ইউরেনিয়াম আসার পরও বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে। এই ধাপগুলো অতিক্রম করার পর কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে। ইউরেনিয়াম আসার পর আমরা রিয়্যাক্টর সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইউরেনিয়ামের সঙ্গে ডামি ফুয়েলও আসছে। প্রথমে ডামি ফুয়েল দিয়ে রিয়্যাক্টর চালিয়ে দেখা হবে সব ঠিক আছে কিনা। সব ঠিক থাকলে তারপর ইউরেনিয়াম দেওয়া হবে।
পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে গেলে দুই ইউনিটে ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
প্রিন্ট