ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা বন্ধ 

নলছিটিতে সরকারি সেবা থেকে ১৪ বছর বঞ্চিত উপজেলাবাসী

সকল যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে প্রায় ১৪ ধরে বন্ধ আছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। যার ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে নলছিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে। জরুরী প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) সকল ধরণের অপারেশন (অস্ত্রপচার) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এতে উপজেলার সাধারন জনগনের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। মৃত্যুঝুঁকিসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা। ফলে অতিরিক্ত অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যা গরীব মানুষদের জন্য দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাড়িয়েছে। যারা সহায় সম্ভল বিক্রি করে চিকিৎসা নিতে পারছেন তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন আর যারা পারছেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে ভাগ্যের উপর।
জানাগেছে, জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াশেই চালানো যেতো । অসহায়, গরীব রুগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল উপজেলা পর্যায়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এ জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ মাহবুব হোসেন ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে যাওয়ার পর এ যাবৎ কোন বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া  চিকিৎসক এখানে যোগদান করেননি। ফলে বিশেষজ্ঞ সার্জন ও  অ্যানেস্থেসিয়া  চিকিৎসকের অভাবে একযুগ ধরে বন্ধ রয়েছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন ।
এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদেরকে নিতে হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । আবার ক্লিনিক সমূহে তাদের সার্জনের অপারেশন চার্জ, ওষুধ ও ক্লিনিক ভাড়াসহ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা অস্বাভাবিক ডেলিভারীর কথা জেনেও ভাগ্যের ওপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালটিতে। সেখানে ডাক্তার ও নার্সরা নরমাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হলে বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় প্রসূতি ও  শিশুর জীবন বাঁচাতে স্বজনরা তখন নিরুপায় হয়ে ধার-দেনা করে তাদেরকে বরিশাল নিতে বাধ্য হচ্ছেন। পথিমধ্যে প্রান হারিয়েছেন প্রসূতি মায়েরা এরকম নজিরও রয়েছে।
আরও জানা গেছে, নলছিটি স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে স্বল্পতা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের। কিছু দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদারের মেয়েকে পোষা বিড়াল আচঁড় দিলে তাকে টিকা নিতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তাতে তার সময়ের অপচয় ও ভোগান্তি দুটোই পোহাতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর হোসেন জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরী প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ সার্জন(গাইনী অপারেশন) পোষ্টিং দিয়ে জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল অপারেশন কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা ডাঃ শিউলি পারভীন জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াতো অন্য কেউ ঐ সেবা দিতে পারবে না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জেনারেল সার্জন, গাইনী সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়  লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। তারা বেশ কয়েকজনকে দিয়েছিলেন কিন্তু মফস্বল শহর হওয়ায় এখানে কোন চিকিৎসক যোগদান করতে চান না।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি জানি। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা বন্ধ 

নলছিটিতে সরকারি সেবা থেকে ১৪ বছর বঞ্চিত উপজেলাবাসী

আপডেট টাইম : ০২:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩
মোঃ আমিন হোসেন, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি :
সকল যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে প্রায় ১৪ ধরে বন্ধ আছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। যার ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে নলছিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে। জরুরী প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) সকল ধরণের অপারেশন (অস্ত্রপচার) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এতে উপজেলার সাধারন জনগনের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। মৃত্যুঝুঁকিসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা। ফলে অতিরিক্ত অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যা গরীব মানুষদের জন্য দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাড়িয়েছে। যারা সহায় সম্ভল বিক্রি করে চিকিৎসা নিতে পারছেন তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন আর যারা পারছেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে ভাগ্যের উপর।
জানাগেছে, জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াশেই চালানো যেতো । অসহায়, গরীব রুগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল উপজেলা পর্যায়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এ জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ মাহবুব হোসেন ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে যাওয়ার পর এ যাবৎ কোন বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া  চিকিৎসক এখানে যোগদান করেননি। ফলে বিশেষজ্ঞ সার্জন ও  অ্যানেস্থেসিয়া  চিকিৎসকের অভাবে একযুগ ধরে বন্ধ রয়েছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন ।
এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদেরকে নিতে হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । আবার ক্লিনিক সমূহে তাদের সার্জনের অপারেশন চার্জ, ওষুধ ও ক্লিনিক ভাড়াসহ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা অস্বাভাবিক ডেলিভারীর কথা জেনেও ভাগ্যের ওপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালটিতে। সেখানে ডাক্তার ও নার্সরা নরমাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হলে বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় প্রসূতি ও  শিশুর জীবন বাঁচাতে স্বজনরা তখন নিরুপায় হয়ে ধার-দেনা করে তাদেরকে বরিশাল নিতে বাধ্য হচ্ছেন। পথিমধ্যে প্রান হারিয়েছেন প্রসূতি মায়েরা এরকম নজিরও রয়েছে।
আরও জানা গেছে, নলছিটি স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে স্বল্পতা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের। কিছু দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদারের মেয়েকে পোষা বিড়াল আচঁড় দিলে তাকে টিকা নিতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তাতে তার সময়ের অপচয় ও ভোগান্তি দুটোই পোহাতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর হোসেন জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরী প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ সার্জন(গাইনী অপারেশন) পোষ্টিং দিয়ে জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল অপারেশন কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা ডাঃ শিউলি পারভীন জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াতো অন্য কেউ ঐ সেবা দিতে পারবে না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জেনারেল সার্জন, গাইনী সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়  লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। তারা বেশ কয়েকজনকে দিয়েছিলেন কিন্তু মফস্বল শহর হওয়ায় এখানে কোন চিকিৎসক যোগদান করতে চান না।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি জানি। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার।

প্রিন্ট