দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার আড়ানি ষ্টেসন এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ কমকার্ন্ড নিয়ন্ত্রন করলেও আলোচিত ঘটনা ছাড়া অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় আইনের আওতায় আসেনি তারা। তাদের ভয়ে মুখ খুলে কথা বলতেও সাহস পাননা কেউ। সম্প্রতি অপরাধ চক্রের হোতা আশিক রানার নের্তৃত্বে সংঘবদ্ধ সদস্যরা জিআই, এসএস পাইপসহ লোহার রড ও ক্রিকেট খেলার কাঠের সামগ্রীসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাঙচুর করে।
বুধবার(১৬ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলার চন্ডিপুর এলাকা থেকে অপরাধ চক্রের হোতা উপজেলার নুরনগর গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে আশিক হোসেন(২৮)সহ তার দুই সহযোগী-মোঃ জুয়েল(২৫) ও মোঃ মানিক(২৪)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মোঃ মানিক একই গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ও মোঃ জুয়েল সাবান আলীর ছেলে। বৃহসপতিবার (১৭আগষ্ট) তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৬আগষ্ট অপরাধ চক্রের সদস্য জুয়েল হোসেন ষ্টেসন এলাকার নাসিরের ছেলে ইলিয়াসকে চড় খাপ্পর মারে। পরে নয়ন হোসেন নামের একজনকে মারধর করলে, সংঘবদ্ধ দলের বেপরোয়া সদস্যরা বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাঙচুর করে।
তাদের মারধরে আড়ানি ষ্টেসন এলাকার ফ্ল্যাক্সি-বিকাশ ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামের বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। আহত হয়, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামসহ অন্তত ১২ জন। জুয়েল আলী জানান, বাড়িতে ঢুকে তাকে মারধরের সময় বাঁধা দিতে গিয়ে তাদের মারধরে গর্ভবতী স্ত্রী মুন্নি বেগম আহত হন। সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, জানান,দোকান মেলার সময় অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে। শরিফুল ইসলাম জানান, এর নের্তৃতে ¡ছিলেন আশিক রানা। ভয়ে অনেকে অভিযোগ করেননি।
ভুক্তভোগী দুইজন গ্রেপ্তার হওয়া ৩জনসহ জহুরুলের ছেলে মুসা আলী (২২), মুনসুর আলীর ছেলে জাহিদ হাসান(২৪), মহসিন আলীর ছেলে আশা রহমান(২১) বাচ্চু আলীর ছেলে বাঁধন আলী(২২) খায়রুল আলমের ছেলে শাওন আলী(২০), ঝিনা গ্রামের আরজানের ছেলে সাইফুল ইসলাম,বেড়ের বাড়ি গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে নয়ন আলীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
আড়ানি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক বজলুর রহমান জানান, এর আগে ৭ মে তাকে ও তার স্ত্রীকে এলোপাথাড়ি মারধর করে জখম করা হয়। আড়ানি পৌর সভার নির্বাচনের আগের দিন তাকে ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেনকে চকচকে খুদে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে । তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকেসহ তার পক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারধর করেছে। চাঁদা না দেওয়ায় পুকুরে বিষ প্রয়োগ করেও প্রায় ৮লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি সাধন করেছে বলে দাবি করেন বজলুর রহমান। ৬আগষ্ট বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পরে আরো ১টি অভিযোগ করেছি।
স্থানীয়রা জানান,তারা আড়ানি ষ্টেসন এলাকার আতঙ্ক। অবৈধ আয়ে তারা চলেন রাজকীয় হালে। মাদক ব্যবসা,জমি দখল,চাঁদাবাজি,কারণে-অকারনে মারধরসহ সবকিছু করে । ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ষ্টেসন এলাকার ৫ বছর বয়সের শিশু ঈশা খাতুনকে অপহরণ করে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল অপরাধ চক্রের সদস্য জহুরুলের ছেলে মুসা আলী (২২) ও তসলিম উদ্দীনের ছেলে হিরো আলী(২৪)। ২০২১ সালের ১১ জুলাই খাগড়বাড়িয়া গ্রামের মহির উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জাকির হোসেনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন আশিক রানা। অন্যদের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারের পর আড়ানি পৌর মেয়র মুক্তার আলী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন -আমি আশা করবো এই মাদক গডফাদারকে যেন মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হয়। আশা করি তাদের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। মেয়র বলেন,অপরাধ চক্রটির ভয়ে আড়ানি ষ্টেসন এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। আহতরা মেডিকেলে দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি ছিলেন। তাদের ভয় ভীতিতে অনেকে থানায় মামলা করতে পারে নাই।
আশাদুজ্জামান রাজন নামের একজন ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন-আশিক অরজিনালি ইয়াবা,হিরোইন,ফেনসিডিল কারবারি। এদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। এলাকার যুব সমাজ ধ্বংশ করে দিয়েছে। এলাকায় চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো সবই এদের সিন্ডিকেট। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেছেন আশিক রানা।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)খায়রুল ইসলাম জানান, খুন জখমের ভয়ভীতি, হত্যার চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রিন্ট