নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর একটি রিসোর্টে শনিবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সময় তাঁকে এক নারীসহ আটক করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পর কয়েক হাজার হেফাজতকর্মী ‘রয়েল’ নামের ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মাওলানা মামুনুলকে মুক্ত করে নিয়ে যান।
তাকে মুক্ত করে নিয়ে গেলেও শনিবার থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু মামুনুল হক। এদিকে আবার শনিবার রাত থেকে মামুনুল হকের দাবি করা দ্বিতীয় স্ত্রীর বেশ কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মামুনুল হকের একটি অডিও-ও ভাইরাল হয়ে যায়।
আর গতকাল রবিবার মামুনুল হকের দাবি করা দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা ও ওই নারীর ছেলের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়ে যায়। আর আজ হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে আব্দুর রহমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আব্দুর রহমানের তিন মিনিট দুই সেকেন্ডের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। আব্দুর রহমান তার ছোট ভাই তামিমকে নিয়ে বাবার সঙ্গে খুলনায় বাস করে বলে জানা গেছে।
আব্দুর রহমান ভিডিওতে বলে, আমি তো অলরেডি বড় হয়ে গেছি, অনেক কিছু শিখছি, জানছি, ম্যাচিউরিটির একটা ভাব আইছে। আমি কিছুটা সহ্য করে নিতে পারি, কিন্তু আমার তো একটা ছোট ভাই আছে, তেরো-চৌদ্দো বছর বয়স। কেবল উঠতি বয়স। এই সময়ে মানুষের কত কথা শোনা লাগতেছে। সমাজের সামনে আইসা মুখ দেখাইতে পারতেছি না।
আব্দুর রহমান আরো বলে, আমার ছোট ভাইটা কাল রাতে যখন এই ঘটনাটা ঘটল, ও কোনো দিন আমি দেখি নাই রাত ৩ থেকে ৪টা পর্যন্ত জাইগা রইছে। কাল দেখি ওর চোখে কোনো ঘুমই নাই। ও বিষয়টা নিয়ে টোটালি মেন্টালি শকড হয়েছে। ও বাসা থেকে বের হয়ে গেছিল। বাসায় থাকলে কী উল্টাপাল্টা করবে আমি নিজেও জানি না, এইটা বইলা বের হয়ে গেছে।
আব্দুর রহমান বলে, আরো বলতে হয়, এটা আমি বলব যে আমার বাবার কর্মের ফল। আমার বাবা মানুষকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। পাগলের মতো ভালোবাসে। ওই লোকটা, কিছুদিন আগে মোল্লারহাটে একটা মাহফিল ছিল। সেখানে পুলিশ তাকে করতে দেবে না। সে একটা জায়গায় লুকিয়ে ছিল। আমার বাবা সেটা দেখে এসে কিভাবে যে কানছে। তার আগেই বিষয়টা আমি জানছি যে আমার মায়ের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল। আমি তখন হাসতে ছিলাম যে এই লোকটা যার জন্য অঝোর ধারায় কানতেছে আর ওই লোকটা (মাওলানা মামুনুল হক) এই লোকটার (বাবা শহীদুল ইসলাম) সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতেছে।
ভিডিওতে আব্দুর রহমান বলে, তারপরে যখন ওনাকে জেলে নিল, মাওলানা মামুনুল হককে জেলে নিল, তখন আমার বাবা থানার ওসি কামরুজ্জামানকে বলে যে আমাকে রেখে ওনাকে ছেড়ে দেন। কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষকে এই কথা বলতে পারে। আর সেই লোকটা এভাবে গাদ্দারি করল।
আব্দুর রহমান বলেন, আরো আগের ঘটনা- যখন ডিভোর্স হয়নি, আমি তখন অনেক ছোট। আমার ছোট ভাই আরো অনেক ছোট, দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল। তখন আমার বাবা বাসায় ছিলেন না। তখন আমি ছিলাম। আমি ঘুমায়া ছিলাম নাকি বাইরে ছিলাম। আমার মা নাকি আমার ছোট ভাইকে দুগ্ধ পান করাচ্ছিল, তখন উনি আমার মায়ের রুমে ঢুকে গিয়ে একটা কুপ্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার মা সেটা প্রত্যাখ্যন করেছিল, না এটা কোনো দিনই সম্ভব না। আপনি তো ঠকাচ্ছেন, আপনার কাছের বন্ধুকে, মানুষটাকে। সে তখন ফিরে এসেছিল। কিন্তু তার একটা তখনই মনে কামভাব ঢুকে গেছে। সে লোভ সামলাইতে পারতেছিল না। সে একটা সুযোগে ছিল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে সে এইটা বুঝতে পারে নাই।
আব্দুর রহমান আরো বলে, যখনই সুযোগ পাইছে এনাদের মধ্যে ডিসট্যান্স বাড়াইয়া দিছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো ঝগড়া হবেই। সে তখনই নক করছে। তখন দুইজনের মধ্যে আরো ডিসট্যান্স বাড়াইয়া দিছে। এইভাবে করে সে একটা পরিবারের খুশি, ভালোবাসা, একটা পরিবারের মধ্যে যে মিলমিশ সম্পর্ক পুরোপুরি সে ধ্বংস করে দিছে। আরো যে এভাবে কত মানুষের, কত পরিবারের ভালোবাসা যে ধ্বংস করে দিছে এর কোনো ঠিক নাই।
আব্দুর রহমান আরো বলে, আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করব, এর যেন সঠিক বিচার হয়। আপনারা কারো অন্ধভক্ত হয়েন না। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস কইরেন না। কারণ সবারই আড়ালে আরেকটা চেহারা থাকে। এই লোকটা আলেম নামধারী মুখোশধারী একটা জানোয়ার। তার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই। সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কাকে কিভাবে দুর্বল করা যায়। আমার আর কিছু বলার ভাষা নাই।
প্রিন্ট