ঢাকা , শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুরে নববর্ষ উদযাপন প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত Logo এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক Logo বোয়ালমারীতে বাড়তি ভাড়া আদায় করায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনকে জরিমানা Logo নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ৩ মামলায় আ’লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে Logo নড়াইলে সেনা অভিযানে দেশীয় অস্ত্র, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ৬ Logo মুকসুদপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এস এস সি পরীক্ষা Logo ফরিদপুরে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী বাধন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার Logo প্রশ্ন পত্র ফাঁসে জড়িত শিক্ষক সালামের খুঁটির জোর কোথায় ? Logo পাটের জিনোম আবিষ্কারক মাকসুদুল আলমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে আলোচনা সভা Logo থানায় মামলা নিতে ওসির অনীহা, পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় পরিবারের আর্তনাদ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সদরপুরে ৭১এর গণহত্যায় ১২ জন শহীদের সরকারি গেজেটভুক্ত করার দাবীঃ পরিবারগুলো চাচ্ছে স্বীকৃতি

-ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুরে অবস্থিত অবহেলিত স্মৃতিফলক ও শহীদ হরিপদ সাহার ছেলে লক্ষণ চন্দ্র সাহা দোকান করার একাংশ।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ও সাড়ে সাতরশি বাজারে ৭১-এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও উক্ত শহীদদের নাম সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়নি। যার কারণে শহীদ পরিবারগুলো পাচ্ছে না সরকারি প্রাপ্য সম্মান, সাহায্য ও সহযোগীতা। উক্ত শহীদদের আত্মত্যাগ ও রক্তের অবদান সদরপুর বাসীর স্মরণে থাকলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন গেজেটভুক্ত করা হয়নি। গণহত্যা দিবসে কোন কর্মসূচি পালন করা হয় না। জাতীয় দিবস গুলোতে শহীদ পরিবারের কারও ডাক পড়ে না। আগামী প্রজন্মের এককালে শহীদের কেউ আর স্মরণই করবে না।

জানা যায়, পাক-হানাদার বাহিনী আল-বদর বিহারী ও রাজাকার বাহিনী ‘৭১এর ১৭ মে (৩রা জৈষ্ঠ) সোমবার সকাল অনুমান ১০টা থেকে কৃষ্ণপুরের সাহাপাড়ায় আক্রমন করে ঘরে ঘরে তল্লাশী ও লুটপাট চালায়। এ সময় ৯জন নারী-পুরুষকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে বেওনেট দিয়ে খুচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ১৮মে (৪ঠা জৈষ্ঠ) সকালে উপজেলার সাড়ে সাতরশি বাজারে পাকহানাদাররা ২য় দফা আক্রমণ করে ৩ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। কৃষ্ণপুরে নিহতরা হলেন শহীদ সুবর্ণমিত্র (৩৫), শহীদ মিহিরমিত্র (১২), শহীদ কৃষ্ণাদাসী সাহা (৬৫), শহীদ ভূপতি মোহন সাহা (৪০), শহীদ ননীগোপাল সাহা (৪৬), শহীদ হরিপদ সাহা (৭০), শহীদ মলিন শীল (২২), শহীদ অলোক সাহা (১৫) ও অজ্ঞাত অপর একযুবক (৩৫)। অপরদিকে সাড়েসাতরশি বাজারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন, শহীদ জগদীশচন্দ্র ভৌমিক (৫০), শহীদ কালিপদ সরকার (৪৫) ও শহিদ বিষ্ণুপদ বনিক (৪৮)।

কৃষ্ণপুরে নিহতদের স্মরণে ২০২০ সালে হাটকৃষ্ণপুর শশ্মানঘাট সংলগ্ন বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়েছে। সাড়েসাত রশি বাজারে নিহতদের স্মরণে কোন স্মৃতিফলক আজও নির্মাণ করা হয়নি।

কৃষ্ণপুরের সেই ভয়াল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বীরমুক্তিযোদ্ধা আঃ ওয়াজেদ মিয়া আঃ মান্নান তালুকদার ও আঃ মজিদ মিয়া সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা সাহাপাড়ায় এসে ৯টি রক্তাক্ত লাশ বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখি। সেই দিন বিকেলে বিভিন্ন লোক-জনের সহযোগিতায় এই স্থানে (বর্তমানে স্মৃতিফলকের স্থান) দুটো বড় গর্ত খুঁড়ে ৯জনকে মাটি চাঁপা দেয়া হয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় শহীদদের স্মরণে এই স্থানে স্মৃতিফলক নির্মিত হলেও আজ পর্যন্ত উক্ত শহীদদের নাম সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়নি।

সাড়ে সাত রশি গ্রামের শহিদ জগদীশচন্দ্র ভৌমিকের দৌহিত্র বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক সেই নৃসংশ হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে জানান, শহীদ পরিবার হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পাইনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয়না। শহীদদের স্মরণে সাড়েসাত রশি বাজারে কোন স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের দাবী শহীদের নাম গেজেটভুক্ত করে শহীদ পরিবারের গুলোর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

গতকাল শুক্রবার সকালে কৃষ্ণপুর সাহা পাড়া গ্রামে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে দেখা যায় কৃষ্ণপুরের শহীদ ভূপতি সাহার ছেলে ও শহীদ কৃষ্ণা দাসীর দৌহিত্র দীপক চন্দ্র সাহা (৫৫), শহীদ হরিপদ সাহার ছেলে লক্ষণ চন্দ্র সাহা (৫৮) ও শহিদ ননী সাহার ছেলে সুদাম সাহা(৫৭) কৃষ্ণপুর তোয়া বাজারে খোলা জায়গায় ছোট দোকান করে। তারা সবাই আর্থিকভাবে দরিদ্র ও অসচ্ছল। তারা সদরপুরে ১২ জন শহীদ দের নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান। এ ছাড়া শহিদ পরিবার হিসেবে তারা স্বীকৃতি চান।

 

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন-‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দেয়ার দরকার বলে মনে করি। তাছাড়া আমাদের কাছে এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা নেই। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আমার আহ্বান তারা যেন বিষয়টির প্রতি গভীর মনোযোগ দেন। মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে এই সকল শহীদদের স্মরণ করা দরকার বলে আমি মনে করি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুরে নববর্ষ উদযাপন প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

সদরপুরে ৭১এর গণহত্যায় ১২ জন শহীদের সরকারি গেজেটভুক্ত করার দাবীঃ পরিবারগুলো চাচ্ছে স্বীকৃতি

আপডেট টাইম : ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০২৩
মোঃ হুমায়ুন কবির, (সদরপুর) ফরিদপুর প্রতিনিধি :

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ও সাড়ে সাতরশি বাজারে ৭১-এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও উক্ত শহীদদের নাম সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়নি। যার কারণে শহীদ পরিবারগুলো পাচ্ছে না সরকারি প্রাপ্য সম্মান, সাহায্য ও সহযোগীতা। উক্ত শহীদদের আত্মত্যাগ ও রক্তের অবদান সদরপুর বাসীর স্মরণে থাকলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন গেজেটভুক্ত করা হয়নি। গণহত্যা দিবসে কোন কর্মসূচি পালন করা হয় না। জাতীয় দিবস গুলোতে শহীদ পরিবারের কারও ডাক পড়ে না। আগামী প্রজন্মের এককালে শহীদের কেউ আর স্মরণই করবে না।

জানা যায়, পাক-হানাদার বাহিনী আল-বদর বিহারী ও রাজাকার বাহিনী ‘৭১এর ১৭ মে (৩রা জৈষ্ঠ) সোমবার সকাল অনুমান ১০টা থেকে কৃষ্ণপুরের সাহাপাড়ায় আক্রমন করে ঘরে ঘরে তল্লাশী ও লুটপাট চালায়। এ সময় ৯জন নারী-পুরুষকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে বেওনেট দিয়ে খুচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ১৮মে (৪ঠা জৈষ্ঠ) সকালে উপজেলার সাড়ে সাতরশি বাজারে পাকহানাদাররা ২য় দফা আক্রমণ করে ৩ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। কৃষ্ণপুরে নিহতরা হলেন শহীদ সুবর্ণমিত্র (৩৫), শহীদ মিহিরমিত্র (১২), শহীদ কৃষ্ণাদাসী সাহা (৬৫), শহীদ ভূপতি মোহন সাহা (৪০), শহীদ ননীগোপাল সাহা (৪৬), শহীদ হরিপদ সাহা (৭০), শহীদ মলিন শীল (২২), শহীদ অলোক সাহা (১৫) ও অজ্ঞাত অপর একযুবক (৩৫)। অপরদিকে সাড়েসাতরশি বাজারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন, শহীদ জগদীশচন্দ্র ভৌমিক (৫০), শহীদ কালিপদ সরকার (৪৫) ও শহিদ বিষ্ণুপদ বনিক (৪৮)।

কৃষ্ণপুরে নিহতদের স্মরণে ২০২০ সালে হাটকৃষ্ণপুর শশ্মানঘাট সংলগ্ন বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়েছে। সাড়েসাত রশি বাজারে নিহতদের স্মরণে কোন স্মৃতিফলক আজও নির্মাণ করা হয়নি।

কৃষ্ণপুরের সেই ভয়াল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বীরমুক্তিযোদ্ধা আঃ ওয়াজেদ মিয়া আঃ মান্নান তালুকদার ও আঃ মজিদ মিয়া সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা সাহাপাড়ায় এসে ৯টি রক্তাক্ত লাশ বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখি। সেই দিন বিকেলে বিভিন্ন লোক-জনের সহযোগিতায় এই স্থানে (বর্তমানে স্মৃতিফলকের স্থান) দুটো বড় গর্ত খুঁড়ে ৯জনকে মাটি চাঁপা দেয়া হয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় শহীদদের স্মরণে এই স্থানে স্মৃতিফলক নির্মিত হলেও আজ পর্যন্ত উক্ত শহীদদের নাম সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়নি।

সাড়ে সাত রশি গ্রামের শহিদ জগদীশচন্দ্র ভৌমিকের দৌহিত্র বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক সেই নৃসংশ হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে জানান, শহীদ পরিবার হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পাইনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকা হয়না। শহীদদের স্মরণে সাড়েসাত রশি বাজারে কোন স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের দাবী শহীদের নাম গেজেটভুক্ত করে শহীদ পরিবারের গুলোর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

গতকাল শুক্রবার সকালে কৃষ্ণপুর সাহা পাড়া গ্রামে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে দেখা যায় কৃষ্ণপুরের শহীদ ভূপতি সাহার ছেলে ও শহীদ কৃষ্ণা দাসীর দৌহিত্র দীপক চন্দ্র সাহা (৫৫), শহীদ হরিপদ সাহার ছেলে লক্ষণ চন্দ্র সাহা (৫৮) ও শহিদ ননী সাহার ছেলে সুদাম সাহা(৫৭) কৃষ্ণপুর তোয়া বাজারে খোলা জায়গায় ছোট দোকান করে। তারা সবাই আর্থিকভাবে দরিদ্র ও অসচ্ছল। তারা সদরপুরে ১২ জন শহীদ দের নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান। এ ছাড়া শহিদ পরিবার হিসেবে তারা স্বীকৃতি চান।

 

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন-‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দেয়ার দরকার বলে মনে করি। তাছাড়া আমাদের কাছে এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা নেই। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আমার আহ্বান তারা যেন বিষয়টির প্রতি গভীর মনোযোগ দেন। মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে এই সকল শহীদদের স্মরণ করা দরকার বলে আমি মনে করি।


প্রিন্ট