বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কথা বলায় ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানদের ডেকে সতর্ক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার (২৬ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করার জন্য ডাকা হয়। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমকে কেন্দ্র করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকাস্থ যেসকল দূতাবাস গণমাধ্যমে একটি যৌথবিবৃতি দিয়েছিল আজ তাদের ডেকেছিলাম।
তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণে আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা দিয়ে সারা দিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।তিনি বলেন, হিরো আলম সতীর্থদের সাথে বিভিন্ন কেন্দ্র অবাধে বিচরণ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি।
অন্যান্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি। তাই কেবল একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে গুটি কয়েক কূটনীতিকবৃন্দ যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এই কূটনীতিকরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়।
তারা যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সাথে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সাথে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে তারা মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।তিনি বলেন, তাদের যৌথ বিবৃতিটি যে ঘটনা প্রবাহের সাথে অসংগতিপূর্ণভাবে যথা সময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।
আজকে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হবার পরামর্শ দিয়েছি।
পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে- সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে বলেও জানান তিনি।এর আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও হাইকমিশন বিবৃতি দিয়েছিল।
এ ছাড়া এই উপনির্বাচনের পরদিন এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। পরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়।
প্রিন্ট