বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেও কুষ্টিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দুটি ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এদিকে ব্রিজ সংশ্লিষ্ট সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া-ঝাউদিয়া হয়ে আলমডাঙ্গা সড়কটি খানাখন্দে রূপ নিয়েছে। এতে বিশাল জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বেড়েছে। ২০২১ সালের ১ মার্চ বিত্তিপাড়া হাট আরঅ্যান্ডএইচ জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া হাট সড়কে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি। কাজটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি কুষ্টিয়া সদর। প্রথমদিকে ব্রিজের কাজ কিছুটা করা হলেও পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে অনেক দিন। কিন্তু ব্রিজের কাজ কবে শেষ হবে, তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারছেন না।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কের বিত্তিপাড়া হতে ঝাউদিয়া বাজার যেতে উজানগ্রাম এলাকার গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের ওপর সেতু নির্মাণের আদেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। কার্যাদেশ দেওয়া হয় একই বছরের ৩ নভেম্বর। সেতুর নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শেষ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। ওই সেতু থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে একই সড়কের কুমার নদে আরেকটি সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৮ মার্চ সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। শুধু কয়েকটি পিলার দেখা যাচ্ছে। সেতু দুটি নির্মাণের কাজ পায় কুষ্টিয়ার সৈয়কত এন্টারপ্রাইজ। পরে পাবনা জেলার এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয় কাজ। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া। দুটি ব্রিজ নির্মাণে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলীর বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। দুটি ব্রিজের কাজ ৩০ শতাংশ শেষ হলেও ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬০ শতাংশ।
গত বুধবার সকালে ব্রিজ দুটি দেখতে গিয়ে কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানান, কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে এই সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। সেতু দুটি নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। সেতু দুটি নির্মাণের সময় পার হলেও শুধু কয়েকটি পিলার ও রড খাড়া হয়ে আছে। আলী আকবর নামে এক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারাতো দেখছেন সেতু দুটির কী অবস্থা। প্রায় ১২ মাস ধরে কোনো কাজই হচ্ছে না। হঠাৎ ২/১ জন লেবার আসে, আবার চলে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
এলজিইডি কুষ্টিয়ার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মণ্ডল বলেন, কাজ ধীরগতিতে চলছে, এটা আমরা জানি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যা থাকায় তিনি সময়মতো কাজ করতে পারেননি। কাজের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন।
অভিযুক্ত কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে। তবে তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি টাকা গচ্ছিত থাকায় এই ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এখন থেকে কাজ নিয়মিত চলবে।
প্রিন্ট