ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়া চিনির মিল ৩ মৌসুম আখ মাড়াই বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগ

টানা তিন মৌসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়া চিনিকলের। এতে বিনষ্ট হওয়ার পথে মিলের ভারী মেশিনারিজ-বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। এ দিকে কয়েক বছর মিল বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা মৌসুম বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়া চিনিকলের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ ও সুনসান নীরবতা। এককালের জৌলুসপূর্ণ এই মিলে এখন নেই কর্ম-ব্যস্ততা ও প্রাণের কলরব। মিলের প্রায় শতাধিক কোয়ার্টার এখন পরিত্যক্ত।

বাউন্ডারি ঘেরা মিলের ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গা জুড়ে ঘাস, লতা-পাতা ও গুল্মে সয়লাব। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিল ভবন ও টিনের ছাউনিসহ অন্যান্য স্থাপনা, আখ পরিবহনে ব্যবহৃত অনন্ত ১৫-২০টি লরি, মিলের সুউচ্চ চিমনি, ভারী মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার যন্ত্র বিনষ্টের উপক্রম। জনবল কাঠামো অনুযায়ী কুষ্টিয়া চিনিকলে ১ হাজার ১৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এখন মাত্র ২৬ জন কর্মচারী বেতন ছাড়াই মিল রক্ষায় নিয়োজিত। অন্যরা কর্ম হারিয়ে পরিবার-পরিজনসহ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ দিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্দেশে কুষ্টিয়ার জগতি চিনিকলে ২০১৯-২০, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মিলে দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্ধের তিন বছর পরও মিলটি চালুতে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় মিলজোনের আওতায় আখ উৎপাদন মারাত্নক হ্রাস পেয়েছে। তবে কুষ্টিয়া জোনের আওতায় চাষকৃত আখ মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলে সরবরাহ করছেন চাষিরা।

মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়া ১২ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়টিও ঝুলে আছে দীর্ঘকাল। সম্ভাবনাময় এই মিলটিকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। মিল বন্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগসহ স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর আগে মিল বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার জগতি নামক চিনিকলটি চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগেটে কয়েক দফা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।

কুষ্টিয়া চিনিকলের কর্মচারী আতিয়ার রহমান ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. শফি উদ্দিন চরম আক্ষেপ করে জানান, মিলের উপার্জনের ওপরই তাদের সংসার ও জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বেতন ছাড়াই এখন খেয়ে-না খেয়ে তারা মিল আঁকড়ে ধরে আছেন। মিলটি পুনরায় চালু হবে এটা তাদের একমাত্র আকুতি।

কুষ্টিয়া চিনিকলের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর থেকে সীমিত পরিসরে মিলের প্রশাসনিক ও দাফতরিক কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে বন্ধ এই মিলে আখ মাড়াই চালু ও চিনি উৎপাদনে সরকারি কোনও নির্দেশনা নেই বলে তিনি জানান।

 

 

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে জগতি এলাকায় ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া চিনিকল। ১৯৬৫-৬৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬-৬৭ সালে মিলটিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় চিনি উৎপাদন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়া চিনির মিল ৩ মৌসুম আখ মাড়াই বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগ

আপডেট টাইম : ১২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :

টানা তিন মৌসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়া চিনিকলের। এতে বিনষ্ট হওয়ার পথে মিলের ভারী মেশিনারিজ-বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। এ দিকে কয়েক বছর মিল বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা মৌসুম বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়া চিনিকলের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ ও সুনসান নীরবতা। এককালের জৌলুসপূর্ণ এই মিলে এখন নেই কর্ম-ব্যস্ততা ও প্রাণের কলরব। মিলের প্রায় শতাধিক কোয়ার্টার এখন পরিত্যক্ত।

বাউন্ডারি ঘেরা মিলের ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গা জুড়ে ঘাস, লতা-পাতা ও গুল্মে সয়লাব। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিল ভবন ও টিনের ছাউনিসহ অন্যান্য স্থাপনা, আখ পরিবহনে ব্যবহৃত অনন্ত ১৫-২০টি লরি, মিলের সুউচ্চ চিমনি, ভারী মেশিনারি ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার যন্ত্র বিনষ্টের উপক্রম। জনবল কাঠামো অনুযায়ী কুষ্টিয়া চিনিকলে ১ হাজার ১৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এখন মাত্র ২৬ জন কর্মচারী বেতন ছাড়াই মিল রক্ষায় নিয়োজিত। অন্যরা কর্ম হারিয়ে পরিবার-পরিজনসহ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ দিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্দেশে কুষ্টিয়ার জগতি চিনিকলে ২০১৯-২০, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মিলে দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বন্ধের তিন বছর পরও মিলটি চালুতে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় মিলজোনের আওতায় আখ উৎপাদন মারাত্নক হ্রাস পেয়েছে। তবে কুষ্টিয়া জোনের আওতায় চাষকৃত আখ মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলে সরবরাহ করছেন চাষিরা।

মিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়া ১২ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়টিও ঝুলে আছে দীর্ঘকাল। সম্ভাবনাময় এই মিলটিকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। মিল বন্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের চরম দুর্ভোগসহ স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর আগে মিল বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার জগতি নামক চিনিকলটি চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগেটে কয়েক দফা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।

কুষ্টিয়া চিনিকলের কর্মচারী আতিয়ার রহমান ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. শফি উদ্দিন চরম আক্ষেপ করে জানান, মিলের উপার্জনের ওপরই তাদের সংসার ও জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বেতন ছাড়াই এখন খেয়ে-না খেয়ে তারা মিল আঁকড়ে ধরে আছেন। মিলটি পুনরায় চালু হবে এটা তাদের একমাত্র আকুতি।

কুষ্টিয়া চিনিকলের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর থেকে সীমিত পরিসরে মিলের প্রশাসনিক ও দাফতরিক কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে বন্ধ এই মিলে আখ মাড়াই চালু ও চিনি উৎপাদনে সরকারি কোনও নির্দেশনা নেই বলে তিনি জানান।

 

 

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে জগতি এলাকায় ২২১ দশমিক ৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া চিনিকল। ১৯৬৫-৬৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬-৬৭ সালে মিলটিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় চিনি উৎপাদন।


প্রিন্ট