ও বৌ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পার দিয়া ঢেঁকি নাচে বৌ নাচে দেলিয়া দুলিয়া। ও বৌ ধান ভানে রে পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের ঢেঁকি নিয়ে এই কবিতা এখনো থাকলেও নানান স্মৃতির এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময়ে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকি তে ধান ভানা। চিড়া কোটা আর চালের গুঁড়া কোটার দৃশ্য হরহামেসাই চোখে পরত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ধান ভানানোর অন্যতম মাধ্যম ঢেঁকি।
বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঢেঁকি প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি। পালটে গেছে গ্রামের চিত্র এই আধুনিককতার আড়ালে চাপা পড়ে গেছে গ্রামের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। ঢেঁকির আর দেখা মিলে না এখন। ধান ভানি রে ঢেঁকি তে পার দিয়া। ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া। ধান ভানি রে। গ্রাম বাংলার তরুণী নব বধূ কৃষানিদের কণ্ঠে এরকম গান আর শোনা যায় না। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। একসময় ভোরে আযানের সাথে সাথে নিরাবতা ভেঙ্গে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত ঢেঁকির শদ্ব।পরিবারের নারীরা দৈনন্দিন ধান গম ও যব ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন এছারা চিড়া তৈরির মতো কঠিন কাজ ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে শবে বরাত, ঈদ,নবান্ন উৎসব পৈাষ পার্বণন্ন বিশেষ দিনে পিঠা পুলি খাওয়ার জন্য আধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকি দিয়ে চালের আটা তৈরি করা হতো। তাছাড়া ঐ সময় এলাকায় বড় গৃহস্তরা আশ পাশে দরিদ্র নারীদের টাকা বা ধান দিয়ে ঢেঁকি তে চাল ও আটা ভাঙ্গিয়ে নিতেন। ধান গম ভাঙ্গার যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে এক সময়ের নিত্য প্রয়োজনীয় ঢেঁকি এখন বিলুপ্ত প্রায়। সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আর্ভিরভাব ঘটে ছিল।
আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রা পথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কালিকাপুর ইউনিয়নের মদনডাঙ্গা গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন বিয়ের পর থেকে ঢেঁকি দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য দব্রাদি মারাই করেছি। সে সময় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ঢেঁকিতে চালের আটা কোটার জন্য আসত। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ আসে না। মনোয়ারা বেগম বলেন একসময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি বড়িতে ঢেঁকি ছিল
তখন ঢেঁকির কদর ও ছিল। এখন প্রতিটি বাড়ি তো দূরের কথা কয়েকটা গ্রাম মিলিয়ে একটি বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া অসম্ভব। আত্রাইয়ের শাহাগোলা ইউনিয়ননের মির্জাপুর গ্রামের মুকুল বলেন হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রযুক্তি সহজ লভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছু এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় হয়তো এ সবের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।
প্রিন্ট