ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

গোপালগঞ্জে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর মৃত্যুঃ টাকার বিনিময়ে দফারফা

গোপালগঞ্জে একটি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে হাফিজুর রহমান কালু (৩৮) নামের এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সাথে টাকার বিনিময়ে দফারফা করেছে। এঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

আলোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে। জানা গেছে হেলথ কেয়ার ক্লিনিক কতৃপক্ষ এবং ডাঃ হিরম্বর পান্ডে ও ডঃ গোলাম সারওয়ারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে গত ৩ জুন সোমবার রাতে হাফিজুর রহমান কালু (৩৮) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হাফিজুর রহমান কালু গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সিংগারকুল গ্রামের মৃত সৈয়দ চৌধুরীর ছেলে।

জানা যায় মৃত্যু হাফিজুর রহমান কালু নাকের পলিপাস চিকিৎসার জন্য ডাঃ গোলাম সারওয়ারের কাছে যান। তিনি অপারেশন করার জন্য ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন এবং ৩ জুন সোমবার রাতে অপারেশন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এসময় রোগীকে এনেস্থিসিয়ার ডাঃ হিরম্বর পান্ডে এনেস্থিসিয়ার ইনজেকশন পুশ করেন। একপর্যায়ে রোগীর প্রেশার বেড়ে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। বিষয়টি টেরপেয়ে ডাঃ গোলাম সারওয়ার, ডাঃ হিরম্বর পান্ডে ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার ক্লিনিক মালিক সমর কান্তি নিজেদের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে এম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত্যু ব্যক্তি ও সজনদের দ্রুত খুলনা পাঠিয়ে দেন। রোগীর স্ত্রী ও স্বজনরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেনি। খুলনায় গিয়ে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের গাফিলতি এবং ভূল চিকিৎসার অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিক এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, রোগীর মৃত্যুর পর পর তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যাপক অভিযোগ ও আলোড়ন সৃষ্টি করে ভূল চিকিৎসার অভিযোগ তোলে। পরবর্তীতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের আপসের প্রস্তাবে রাজি হয় তারা। পরে ক্লিনিক ভবনের মালিক এমদাদ হোসেন ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় টাকার বিনিময়ে ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাটির দফারফা হয়। তারা আরো বলেন, এই ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক থেকে গত বছর ভূয়া ডাক্তার আটক করে ছিল প্রশাসন।

অনুসন্ধান করে ক্লিনিকের একটি গোপন সূত্রে জানা যায়, রোগীকে এনেস্থিসিয়ার ইনজেকশন পুশ করার আগে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি। এবিষয়ে ডাঃ গোলাম সারওয়ার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এনেস্থিসিয়া ইনজেকশন পুশ করার সাথে রোগীর দ্রুত প্রেশার বেড়ে গেলে আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠিয়ে দেই। তার পর রোগীর মৃত্যুর খবর জানতে পারি। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পূর্বে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জান্তে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। এবিষয়ে এনেস্থিসিয়ার ডাক্তার হিরম্বর পান্ডেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে ডাক্তার হিরম্বর পান্ডে আত্মগোপন করেছেন।

এবিষয়ে ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমর কান্তি সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিতে অ-স্বীকৃতি জানান।

গোপালগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ও আনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এ্যাডভোকেট কাজী মেজবাহ উদ্দিন জানান, এমন ঘটনা এই ক্লিনিকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতি না ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসা।

 

 

অপারেশন থিয়েটারে রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ নেওয়াজ মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, তবে মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আগামীকাল ক্লিনিকটি পরিদর্শনে যাব। নাগরিকদের সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা পরিলক্ষিত হলে লাইসেন্স বাতিল করে সিলগালা করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

গোপালগঞ্জে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর মৃত্যুঃ টাকার বিনিময়ে দফারফা

আপডেট টাইম : ০২:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহীন, গোপালগঞ্জ অফিস :

গোপালগঞ্জে একটি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে হাফিজুর রহমান কালু (৩৮) নামের এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সাথে টাকার বিনিময়ে দফারফা করেছে। এঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

আলোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে। জানা গেছে হেলথ কেয়ার ক্লিনিক কতৃপক্ষ এবং ডাঃ হিরম্বর পান্ডে ও ডঃ গোলাম সারওয়ারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে গত ৩ জুন সোমবার রাতে হাফিজুর রহমান কালু (৩৮) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হাফিজুর রহমান কালু গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সিংগারকুল গ্রামের মৃত সৈয়দ চৌধুরীর ছেলে।

জানা যায় মৃত্যু হাফিজুর রহমান কালু নাকের পলিপাস চিকিৎসার জন্য ডাঃ গোলাম সারওয়ারের কাছে যান। তিনি অপারেশন করার জন্য ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন এবং ৩ জুন সোমবার রাতে অপারেশন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এসময় রোগীকে এনেস্থিসিয়ার ডাঃ হিরম্বর পান্ডে এনেস্থিসিয়ার ইনজেকশন পুশ করেন। একপর্যায়ে রোগীর প্রেশার বেড়ে যায় এবং মৃত্যু ঘটে। বিষয়টি টেরপেয়ে ডাঃ গোলাম সারওয়ার, ডাঃ হিরম্বর পান্ডে ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার ক্লিনিক মালিক সমর কান্তি নিজেদের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে এম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত্যু ব্যক্তি ও সজনদের দ্রুত খুলনা পাঠিয়ে দেন। রোগীর স্ত্রী ও স্বজনরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেনি। খুলনায় গিয়ে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের গাফিলতি এবং ভূল চিকিৎসার অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিক এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, রোগীর মৃত্যুর পর পর তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যাপক অভিযোগ ও আলোড়ন সৃষ্টি করে ভূল চিকিৎসার অভিযোগ তোলে। পরবর্তীতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের আপসের প্রস্তাবে রাজি হয় তারা। পরে ক্লিনিক ভবনের মালিক এমদাদ হোসেন ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় টাকার বিনিময়ে ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাটির দফারফা হয়। তারা আরো বলেন, এই ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক থেকে গত বছর ভূয়া ডাক্তার আটক করে ছিল প্রশাসন।

অনুসন্ধান করে ক্লিনিকের একটি গোপন সূত্রে জানা যায়, রোগীকে এনেস্থিসিয়ার ইনজেকশন পুশ করার আগে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি। এবিষয়ে ডাঃ গোলাম সারওয়ার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এনেস্থিসিয়া ইনজেকশন পুশ করার সাথে রোগীর দ্রুত প্রেশার বেড়ে গেলে আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠিয়ে দেই। তার পর রোগীর মৃত্যুর খবর জানতে পারি। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পূর্বে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জান্তে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। এবিষয়ে এনেস্থিসিয়ার ডাক্তার হিরম্বর পান্ডেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে ডাক্তার হিরম্বর পান্ডে আত্মগোপন করেছেন।

এবিষয়ে ডিজিটাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমর কান্তি সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিতে অ-স্বীকৃতি জানান।

গোপালগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ও আনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এ্যাডভোকেট কাজী মেজবাহ উদ্দিন জানান, এমন ঘটনা এই ক্লিনিকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গাফিলতি না ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসা।

 

 

অপারেশন থিয়েটারে রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ নেওয়াজ মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, তবে মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আগামীকাল ক্লিনিকটি পরিদর্শনে যাব। নাগরিকদের সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা পরিলক্ষিত হলে লাইসেন্স বাতিল করে সিলগালা করা হবে।


প্রিন্ট