নিজেদের অপকর্মের জন্য ভোট পাবে না জেনেই বিএনপি নির্বাচন থেকে পিছটান দিতে ছুতো খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জেনেভার হিল্টন হোটেলে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনিতে তো তারা (বিএনপি) চোরের দল, ভোট ডাকাতের দল, ভোট ডাকাতি ছাড়া তো তাদের পক্ষে ক্ষমতায় আসা সম্ভব না। আর যারা দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে এসেছিল জনগণ আর তাদের চায় না, সেই জন্য তারা ভোট পায় না। তিনি বলেন, তারা জানে যে ভোট পাবে না। সেই জন্য তারা নানাভাবে ছুতো খোঁজে, কীভাবে পিছটান মারবে। সেই তালেই তারা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সময় মতো নির্বাচন হবে, জনগণ ভোট দেবে, জনগণ ভোটের মালিক, যাকে খুশি তাকে দেবে, যে জনগণের ভোট পাবে সে সরকার গঠন করবে। এটাই গণতান্ত্রিক ধারা, আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। বিএনপি সরকার ফেলে দেবে—সরকার এতটা দুর্বল নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর তোলপাড়, একেবারে সরকারকে ফেলেই দেবে। এত দুর্বল অবস্থায় তো আমরা আসি নাই যে, আমাদের ফেলে দেবে। আমাদের তো জনগণ আছে। আমাদের শক্তি হচ্ছে জনগণ।
বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিরোধিতা করে শেখ হাসিনা বলেন, সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আমরা গঠন করে দিয়েছি। তারপরও বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়।
বিএনপি শিশু-পাগল হয়ে গেছে কি না—এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে খালেদা জিয়া একবার বলেছিল, পাগল আর শিশু ছাড়া নির্দলীয়-নিরপেক্ষ হয় না। তো এখন ওরা কি পাগল হয়ে গেল নাকি শিশু হয়ে গেল, তাই আমি জানতে চাই। শিশু-পাগল, এটা ভালো নাম। তারা এখন শিশু-পাগল হয়ে গেছে।
নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা দিনে-দুপুরে মানুষ খুন করে, যারা লুটপাট করেছে, দুর্নীতি করেছে, আজকে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সেই আসামি যে দলের নেতা সেই দল নির্বাচনে যাবে কী নিয়ে—সেটাই তো কথা। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য এখন নানা ধরনের অপপ্রচার, চার্তুয করে বেড়াচ্ছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, বাংলাদেশে এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। এর জন্য আমার পার্টির নেতাকর্মীরা জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। আর গ্রেনেড হামলা থেকে কোনোমতে বেঁচে গেছি।
বাংলাদেশের যে কোনো ক্রাইসিসে প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে বৈধ পথে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বিদেশ যেতে আগ্রহীদের দালালের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে বৈধ পথে রেজিস্ট্রেশন করে বিদেশে যাওয়ার জন্যও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
মৎস্য খাতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার : এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা। এ সময় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বাংলাদেশকে মৎস্য খাতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, তারা এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে এক চুক্তি সই করতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য খাতে খুব একটা ভর্তুকি দেয় না। আমরা বলেছি, এটি বিবেচনা করব।
কয়েকটি বড় দেশের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ডিসপিউট স্যাটেলমেন্ট বডি’ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় বলে জানিয়েছেন এর মহাপরিচালক।
ওকোনজো-ইওয়েলা বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০-তে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলেন; সেহেতু তিনি (শেখ হাসিনা) এই ‘ডিসপিউট স্যাটেলমেন্ট বডি’ সক্রিয় করার বিষয়ে কথা বলতে পারেন।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, এই ‘ডিসপিউট স্যাটেলমেন্ট বডি’ সংস্থাটির মূল শক্তি।
ওকোনজো-ইওয়েলা বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন। রপ্তানি ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ওষুধ এবং আইটি সেক্টরে গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।
গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সেক্টরে বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে জাপান, থাইল্যান্ড এবং মালদ্বীপের থেকে বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ইতোমধ্যে জাপান এবং মালদ্বীপের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এর আগে একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কাতারের শ্রমমন্ত্রী আলি বিন সামিক আল মারি। আলি বিন সামিক বলেন, তাদের দেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি জনশক্তি কাজ করছে। এসব জনশক্তির কাজে তারা সন্তুষ্ট। কাতারের মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিতে তারা আগ্রহী। এ বিষয়ে তারা একটি চুক্তি করবে।
এ ছাড়া একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াব।
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : সুইজারল্যান্ডে সরকারি সফর শেষে শুক্রবার দেশের উদ্দেশে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট) জেনেভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। শুক্রবার রাত দেড়টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা।
প্রিন্ট