কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মা নদীর বুক জুড়ে এখন চলছে নৌকা বানানোর ধুম। আমাদের দেশ নদী মাতৃকদেশ। মাঝি মাল্লার দেশ। বর্ষার পানিতে যখন নদী থইথই করে, তখন যেন নদীর পাশ ঘেষে জেলেসহ সাধারণ মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ভেড়ামারা পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে এখন চলছে নৌকা বানানো। এই সময় নৌকার কারিগর নৌকা বানানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
প্রতিটি ঘরে বাইছে যেন আনন্দের ঘনঘটা। কে কত বড় নৌকা বানাবেথ সর্বত্র একই কথা। এ যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মা নদীর বুকজুড়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন সেতুর কোলজুড়ে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা মসলেমপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম নৌকা বানানোর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, নদী যেন আমাদের জীবনসঙ্গী। আর বেঁচে থাকার একমাত্র হাতিয়ার নৌকা। প্রতি বছর বর্ষার সময় এলেই নদীর ক‚লজুড়ে সব মানুষ নৌকা বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন।
মোকারিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ জানান.ভেড়ামারার চারপাশ ঘিরেই রয়েছে নদী। রয়েছে চর এলাকা । নদী পার হয়ে যেতে হয় ঐ চর এলাকায়। এছাড়া ও বেশ কিছু অঞ্চল নিচু। বর্ষায় বেশ কিছু অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।ফলাফল তখন নৌকা হয়ে দাঁড়ায় অনেক প্রয়োজনীয় বস্তু। এই সময়ে নৌকায় করেই রাস্তায় চলাচলসহ বাকি কাজকর্ম করতে হয় এই নিচু অঞ্চলের মানুষদের।
তাই এই সব অঞ্চলগুলোতে বর্ষাকালকে সামনে রেখে বেড়ে যায় বিভিন্ন কাঠমিস্ত্রীদের নৌকা বানানোর ব্যস্ততা। বিভিন্ন ছোট-বড় সাইজের ডিঙি নৌকা বানানোর ধুম পরে যায় এসময়।এই ধরনের নৌকাকে বলা হয় কোষা নৌকা।
নৌকা মিস্ত্রী আজিজুল হক ও উকিল আলী জানান,কোষা নৌকা বানানোর প্রধান উপকরণ হচ্ছে,চাম্বল, মেহগনি, কড়ইসহ অন্যান্য জাতের কাঠ।প্রায় ৪/৫ জন কারিগর মিলে দৈনিক ৩ থেকে ৪টি ডিঙ্গি কোষা তৈরি করতে পারেন।আকার ও সাইজ অনুসারে এসব নৌকার দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কাঠের মান ও আকার অনুসারে রেডিমেট নৌকা সর্বোনি¤œ ৮ হাজার থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নৌকা তৈরির অর্ডার নিয়েও বানানো হয়।
নৌকা বানানো হয়ে গেলেই সবাই একযোগে সাজসাজ রবে আনন্দ আর হৈহুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে নদীর পাড় থেকে নৌকা নদীতে নামিয়ে দেয়। যা দেখার জন্য এলাকার নারী, পুরুষ, শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় জমায়। এর সঙ্গে যোগদান করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আনন্দপ্রিয় মানুষ। এই নৌকায় লাল, নীল ও হলুদ পতাকা দিয়ে সাজিয়ে মাঝিরা রওনা হন গভীর নদীতে মাছ ধরতে।
প্রিন্ট