ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা Logo কুষ্টিয়ায় পাউবোর কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগে দুদকের অভিযান Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছেলের বউকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর গ্রেফতার Logo ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল Logo কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্র-মাদকসহ আটক ১ Logo কুষ্টিয়া পৌরসভার গেটে আবর্জনা ফেলে কর্মবিরতিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা Logo ভূরুঙ্গামারীতে ট্রাক-অটোর মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের শিশুসহ নিহত ২, আহত ৩ Logo ফরিদপুরে সাধারণ জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত  Logo মুকসুদপুরে গৌতম হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন Logo তানোরে আলুর বস্তার ভাড়া ১২ টাকা !
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আবেদন করেও ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড

শবজি বিক্রি করে সংসার চলে প্রতিবন্ধী সালাম বিশ্বাসের

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা শহরে প্রতিদিন শবজি বিক্রি করে সংসারের ভরণপোষন চালাতে হয় ষাটোর্ধ শারীরিক প্রতিবন্ধী সালাম বিশ্বাসের। উপার্জনক্ষম তিন সন্তান থাকলেও বিয়ের পর ছেলেরা পৃথক হয়ে যাওয়ায় স্ত্রীসহ নিজের খাবার নিজেকেই জোগাড় করতে হয়। হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন তিনি শহরের মাছ বাজারের সামনে শবজি বিক্রি করেন। বাড়ির পাশে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে স্ত্রীর সহযোগিতায় বিভিন্ন শবজি চাষ করে বাজারে এনে বিক্রি করে চাল ডাল কিনে তবেই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। তিনি তিন ছেলে এবং তিন মেয়ের পিতা। বিয়ের পর মেয়েরা যার যার মত স্বামীর সংসার করছেন। তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভ্যান চালিয়ে এবং আরেকজন জন শ্রমীকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্য ছেলে হাফেজি পাশ করে এলাকার একটি মসজিদের ঈমামতি করেন। অবশ্য হাফেজ তাজুল মাঝেমধ্যে পিতা মাতার একটু খোঁজ-খবর রাখলেও তা যৎসামান্য। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে কাগজ-পত্র জমা দিলেও চালু হয়নি ভাতা। এক বছর পূর্বে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেও ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড। বয়স ষাটের ঊর্দ্ধে গেলেও ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতাও। তাই নিজেই উপার্জন করে চালাতে হয় নিজের সংসার।

শবজি বিক্রেতা শারীরিক প্রতিবন্ধী সালামের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পূর্বনারায়নপুর গ্রামে। পরিবারের সদস্যদের ভাল রাখতে ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে শ্রমীকের কাজে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে ৫ বছর থাকার পর কারখানায় একটি দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছিলেন। আর তখন তিনি ছেলেদের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। শয্যাশায়ী ছিলেন ৫ বছরের অধিক সময়। এরপর এক সময় তিনি স্ত্রী শেফালি বেগমের সহযোগিতায় বাড়ির পার্শবর্ত্বী ১০ শতাংশ জমিতে মৌসুমি শবজি চাষ করে হুইল চেয়ারে বসে বাজারে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করতে শুরু করেন।

তিন ছেলে তিন মেয়ের পিতার সালাম বিশ্বাস। বিয়ের পর মেয়েরা যার যার মত স্বামীর সংসার করছেন। মাঝেমধ্যে তারা অসুস্থ পিতাকে দেখতে আসেন। তিন ছেলের মধ্যে তাজুল ইসলাম হাফেজ। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমামতি করেন। অন্য দুই ছেলে ইয়াছিন ভ্যান চালক এবং রাজু শ্রমীকের কাজ করেন। তারাও বিয়ের পর থেকে পৃথক হয়ে যার যার মত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সংসার করছেন। পিতা-মাতার খবর কেউ রাখেন না। তবে হাফেজ তাজুল মাঝে মধ্যে অসুস্থ পিতাকে সহায়তা করেন বলে জানা গেছে। আর তা দিয়ে সংসার চলেনা বিধায় সালাম বিশ্বাস স্ত্রীর সহযোগিতায় শবজি চাষ করে তা বাজারে বিক্রি করে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার পরিচালনা করেন।

সালাম বিশ্বাস বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জলের কাছে কাগজপত্র জমা দিলেও আমার ভাতার কার্ড হয়নি। তিনি আরো বলেন, কার্ডের জন্য সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেও কাজ হয়নি। সরকারি কোন সহযোতিাও না পেয়ে শাকপাতা বিক্রি করে সংসার চালাই। মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আক্তার কাফুর উজ্জল বলেন, কাগজপত্র হাতে দিলে হবেনা অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রব বাবু বলেন, আমি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছি। নথিপত্র না দেখে কিছুই বলতে পারবো না। তবে উনি আমার অফিসে আসলে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলে করে দেওয়া হবে।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডসহ সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতিবাজ-মাফিয়াদের রাজনীতি চাই না”— ঝালকাঠিতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঘোষণা

error: Content is protected !!

আবেদন করেও ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড

শবজি বিক্রি করে সংসার চলে প্রতিবন্ধী সালাম বিশ্বাসের

আপডেট টাইম : ০১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মে ২০২৩
মো. কামরুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরা :

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা শহরে প্রতিদিন শবজি বিক্রি করে সংসারের ভরণপোষন চালাতে হয় ষাটোর্ধ শারীরিক প্রতিবন্ধী সালাম বিশ্বাসের। উপার্জনক্ষম তিন সন্তান থাকলেও বিয়ের পর ছেলেরা পৃথক হয়ে যাওয়ায় স্ত্রীসহ নিজের খাবার নিজেকেই জোগাড় করতে হয়। হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন তিনি শহরের মাছ বাজারের সামনে শবজি বিক্রি করেন। বাড়ির পাশে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে স্ত্রীর সহযোগিতায় বিভিন্ন শবজি চাষ করে বাজারে এনে বিক্রি করে চাল ডাল কিনে তবেই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। তিনি তিন ছেলে এবং তিন মেয়ের পিতা। বিয়ের পর মেয়েরা যার যার মত স্বামীর সংসার করছেন। তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভ্যান চালিয়ে এবং আরেকজন জন শ্রমীকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্য ছেলে হাফেজি পাশ করে এলাকার একটি মসজিদের ঈমামতি করেন। অবশ্য হাফেজ তাজুল মাঝেমধ্যে পিতা মাতার একটু খোঁজ-খবর রাখলেও তা যৎসামান্য। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে কাগজ-পত্র জমা দিলেও চালু হয়নি ভাতা। এক বছর পূর্বে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেও ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড। বয়স ষাটের ঊর্দ্ধে গেলেও ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতাও। তাই নিজেই উপার্জন করে চালাতে হয় নিজের সংসার।

শবজি বিক্রেতা শারীরিক প্রতিবন্ধী সালামের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পূর্বনারায়নপুর গ্রামে। পরিবারের সদস্যদের ভাল রাখতে ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে শ্রমীকের কাজে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে ৫ বছর থাকার পর কারখানায় একটি দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছিলেন। আর তখন তিনি ছেলেদের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। শয্যাশায়ী ছিলেন ৫ বছরের অধিক সময়। এরপর এক সময় তিনি স্ত্রী শেফালি বেগমের সহযোগিতায় বাড়ির পার্শবর্ত্বী ১০ শতাংশ জমিতে মৌসুমি শবজি চাষ করে হুইল চেয়ারে বসে বাজারে বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করতে শুরু করেন।

তিন ছেলে তিন মেয়ের পিতার সালাম বিশ্বাস। বিয়ের পর মেয়েরা যার যার মত স্বামীর সংসার করছেন। মাঝেমধ্যে তারা অসুস্থ পিতাকে দেখতে আসেন। তিন ছেলের মধ্যে তাজুল ইসলাম হাফেজ। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমামতি করেন। অন্য দুই ছেলে ইয়াছিন ভ্যান চালক এবং রাজু শ্রমীকের কাজ করেন। তারাও বিয়ের পর থেকে পৃথক হয়ে যার যার মত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সংসার করছেন। পিতা-মাতার খবর কেউ রাখেন না। তবে হাফেজ তাজুল মাঝে মধ্যে অসুস্থ পিতাকে সহায়তা করেন বলে জানা গেছে। আর তা দিয়ে সংসার চলেনা বিধায় সালাম বিশ্বাস স্ত্রীর সহযোগিতায় শবজি চাষ করে তা বাজারে বিক্রি করে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার পরিচালনা করেন।

সালাম বিশ্বাস বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জলের কাছে কাগজপত্র জমা দিলেও আমার ভাতার কার্ড হয়নি। তিনি আরো বলেন, কার্ডের জন্য সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করেও কাজ হয়নি। সরকারি কোন সহযোতিাও না পেয়ে শাকপাতা বিক্রি করে সংসার চালাই। মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আক্তার কাফুর উজ্জল বলেন, কাগজপত্র হাতে দিলে হবেনা অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রব বাবু বলেন, আমি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছি। নথিপত্র না দেখে কিছুই বলতে পারবো না। তবে উনি আমার অফিসে আসলে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলে করে দেওয়া হবে।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডসহ সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।


প্রিন্ট